
হজরত আবু দারদা (রা.)-এর ইন্তেকালের সময়কার ঘটনা
হজরত আবু দারদা (রা.) যখন মৃত্যুশয্যায় ছিলেন, তখন ব্যাকুলভাবে কাঁদছিলেন। তাঁর স্ত্রী উম্মু দারদা (রা.) আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“আপনি তো রাসূল (সা.)-এর একজন সাহাবি, তবুও এত কাঁদছেন কেন?”
তিনি জবাব দিলেন,
“আমি কেন কাঁদবো না? আমার মুক্তির কী হবে, তা আল্লাহই ভালো জানেন!”
একদিন তিনি তাঁর ছেলে বিলালকে ডেকে বললেন,
“দেখো, একদিন তোমাকেও এই অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। সেই দিনের জন্য প্রস্তুতি নাও।”
খোদাভীতির চূড়ান্ত প্রকাশ
হজরত আবু দারদা (রা.)-এর আল্লাহভীতি ছিল অত্যন্ত প্রবল। মৃত্যুর সময় যত ঘনিয়ে এলো, ততই তাঁর আহাজারি বাড়তে লাগল। পাশে বসে স্ত্রী সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,
“আপনি তো সবসময় মৃত্যুকে ভালোবাসতেন। এখন এতো অস্থির হচ্ছেন কেন?”
তিনি জবাব দিলেন,
“তোমার কথা ঠিক। আমি মৃত্যুকে ভালোবাসতাম। কিন্তু যখন নিশ্চিত জানলাম, মৃত্যুর সময় এসে গেছে, তখন অস্থিরতা বেড়ে গেল।”
এ কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন এবং বললেন,
“এখন আমার শেষ সময়, আমাকে কালিমার তালকিন দাও।”
লোকেরা তাঁকে কালিমা শোনাল, আর তিনি তা উচ্চারণ করতে করতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।
মৃত্যুশয্যায় শেষ নসিহত
যখন তিনি অন্তিম রোগে আক্রান্ত ছিলেন, তখন একদিন ইউসুফ ইবনে আবদিল্লাহ ইবনে সালাম তাঁর কাছে ইলম অর্জনের উদ্দেশ্যে এলেন।
হজরত আবু দারদা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন,
“কি উদ্দেশ্যে এসেছো?”
ইউসুফ তাঁর মুমূর্ষু অবস্থা দেখে বললেন,
“আমার আব্বার সঙ্গে আপনার গভীর সম্পর্ক ছিল, সেই সূত্রেই আপনার সাক্ষাৎ করতে এসেছি।”
তিনি বললেন,
“মিথ্যা খুবই নিকৃষ্ট জিনিস। তবে কেউ যদি মিথ্যা বলে, তারপর ইস্তিগফার করে, তাহলে আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন।” (মুসনাদ/৬৪৫০)
ইউসুফ তাঁর সঙ্গেই অবস্থান করলেন মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।
মৃত্যুর আগে তিনি ইউসুফকে ডেকে বললেন,
“আমার মৃত্যু আসন্ন, এই সংবাদ লোকদের জানিয়ে দাও।”
সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই চারদিকে মানুষের ঢল নেমে এলো। ঘরের ভেতরে-বাইরে শুধু মানুষের সমাগম। যখন তাঁকে জানানো হলো যে, অসংখ্য মানুষ তাঁর কাছে এসেছে, তিনি বললেন,
“আমাকে বাইরে নিয়ে চলো।”
তাঁকে ধরে বাইরে আনা হলে তিনি উঠে বসলেন এবং জনগণের উদ্দেশ্যে একটি হাদিস বর্ণনা করলেন। এরপর তিনি ইন্তেকাল করেন।
এই ঘটনা তাঁর গভীর আল্লাহভীতি, ইলমের প্রতি আগ্রহ, এবং মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তেও মানুষকে উপদেশ দেওয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।