
পিআর পদ্ধতির আন্দোলনের লক্ষ্যই হচ্ছে নির্বাচন বিলম্বিত করা, যা জনগণ গ্রহণ করবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এই শঙ্কা প্রকাশ করেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির উদ্যোগে ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর মনি মারা যান।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাগপার খন্দকার লুফুর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদিকী প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কয়েকটি রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতি নিয়ে কথা বলছে এবং যেটার জন্য তারা আন্দোলন করছে; নিশ্চয়ই আপনারা দেখেছেন যে আন্দোলনও করছে। এর লক্ষ্য একটাই সেই লক্ষ্য হচ্ছে, নির্বাচনকে বিলম্বিত করা, জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি এই দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। আমাদের দলের পক্ষ থেকে তো আমরা স্পষ্ট করে বলেছি এখন বলছি, জনগণই এই পদ্ধতি গ্রহণ করবে না, চাপিয়ে দেওয়া কোনো কিছু এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না।’
বিএনপি মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুত অর্থাৎ যে কমিটমেন্টটা আছে এই সরকারের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের যে, ২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই এই নির্বাচন হবে, আমরা সেটাই দেখতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ নির্বাচন দেখতে চায় এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চায় এবং গণতন্ত্রের মধ্য দিয়েই জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করতে চায়।’
‘নির্বাচন নিয়ে আশাবাদ’ ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা জানি যে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে যেকোনো দল জয়ী হতে পারে জনগণের ইচ্ছার ওপর দিয়ে। কিন্তু সেই দলকেই জনগণ বেছে নেবে, যে দল পরীক্ষিত অতীতে যারা পরীক্ষা দিয়েছে অর্থাৎ সরকারে ছিল কাজ করেছে। যেই দল মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছে, যেই দল অন্ধকার থেকে আলোতে টেনে নিয়ে এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই এই দেশে প্রথম সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করেছিলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রথম এই দেশের সংবিধানে আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও অবিশ্বাস এই কথাটি রেখে তিনি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। এখন কিছু দল সেগুলোকে বিকৃত করে বিভিন্নভাবে এই বিএনপিকে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা বয়স কম তারা জানে না, যাদের বয়স একটু বেশি তারা দেখেছেন ১৯৭৫ সাল নভেম্বর কী অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এই দেশের মানুষ সেই ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বেরিয়ে এসে সম্পূর্ণভাবে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য নতুন করে তখন স্বনির্ভর বাংলাদেশ তৈরি করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ঠিক একইভাবে আজকে আবার আমরা সবাই এক হয়েছি, এক হয়েছি যে, আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা অবশ্যই বাংলাদেশকে আবার একটা স্বনির্ভর, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একটি বাংলাদেশ যে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, সেই বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই।’
ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অনেক ষড়যন্ত্র আছে, চক্রান্ত আছে। সমস্ত ষড়যন্ত্র চক্রান্তকে পরাজিত করবার শক্তি বাংলাদেশের মানুষের আছে।’
‘সামনে কঠিন পরীক্ষা’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সামনের যে পরীক্ষা সেই পরীক্ষা কঠিন পরীক্ষা। প্রতিদিন আপনাদের এই ইউটিউব, টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া- এগুলোতে বিভিন্ন রকম সত্য-মিথ্যা মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস যে, আপনারা এখান থেকে সঠিক তথ্যটি বেছে নিতে সক্ষম, আমার বিশ্বাস এই দেশের মানুষ কখনো ভুল করে না, এই দেশের মানুষ সবসময় সঠিক পথে এগিয়ে যায়। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে চাই। যেখানে একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তার আস্থা প্রকাশ করবে এবং তাদের একটা পার্লামেন্ট বেছে নেবে এবং তাদের সরকার বেছে নেবে।আপনাদেরকে আবার অনুরোধ করব যে, সুযোগ আমরা পেয়েছি বাংলাদেশকে নতুন করে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবার সেই সুযোগ যেন আমরা না হারাই।’
‘একাত্তর মুছে ফেলা যাবে না’ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই কথাটা খুব জরুরি- কিছু সংখ্যক মানুষ চেষ্টা করে আমাদের ১৯৭১ সালের ইতিহাসকে ভুলে দিতে। এটাও সবসময় মাথায় রাখতে হবে যে, একাত্তরে যুদ্ধ হয়েছিল বলেই আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম, স্বাধীন হয়েছিলাম বলেই আজকে আমরা নতুন রাষ্ট্রের নতুন চিন্তা করতে পারছি, স্বাধীন হয়েছিলাম বলেই কিন্তু আমরা আজকে এই বাংলাদেশকে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করবার যে সংগ্রাম সেই সংগ্রামে অংশ নিতে পারছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তখন আমাদের বয়স আমরা তখন যুবক আমরা লড়াই করেছি যুদ্ধ করেছি। আমাদের মধ্যে এখানে অনেকে আছেন যারা সেই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা পরবর্তীকালে গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোতে অংশ নিয়েছেন, এই ’২৪ অংশ নিয়েছেন আমরা সবাই এই যুদ্ধগুলোতে অংশ নিয়েছি। শুধু একটা মাত্র লক্ষ্য যে, আমরা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ একটা বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেই কথাটি মাথায় রেখে আমরা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকারের বয়স এক বছর মাস হয়েছে-এই ১৪ মাসে রাতারাতি আলাউদ্দিনের চেরাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটা খুব সুন্দর বানিয়ে ফেলবে এই আশা জনগণ করে না এই সরকারের কাছ থেকে। কিন্তু প্রক্রিয়াটা শুরুটা চায় যে সেই প্রক্রিয়া শুরু হোক যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ দেখতে পাবো।’
‘আপনারা ইতিমধ্যে দেখেছেন, যে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব তিনি তার একটা সাক্ষাৎকার বিবিসিতে দিয়েছেন। সেখানে তিনি এই প্রশ্নগুলো তুলে ধরেছেন এবং কিভাবে তিনি দেশের সমস্যার সমাধান করতে চান সেই সমস্যাগুলো তিনি তুলে ধরেছেন, সেই কথাগুলো তিনি বলেছেন, ফিনান্সিয়াল টাইমসেও তিনি একইভাবে কথাগুলো বলেছেন।বেকার সমস্যাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে বিএনপি ইতিমধ্যে কমিটি গঠন করে কাজ শুরু করেছে এবং অনেক কাজ সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।