১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার
১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকায় প্রতিদিন ২৩০ টন মানব বর্জ্য উন্মুক্ত জলাশয়ে পড়ছে

শেয়ার করুন

দেশের প্রায় সাড়ে ৬ কোটি মানুষ এখনো নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার বাইরে রয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি। বিশেষ করে, প্রতিদিন রাজধানী ঢাকায় প্রায় ২৩০ টন মানববর্জ্য সরাসরি খাল-বিল ও জলাশয়ে গিয়ে পড়ছে। এতে পরিবেশ দূষণ, জলজ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়ছে। পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ—যেমন বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়—দেশের স্যানিটেশন ব্যবস্থা আরও বিপর্যস্ত করে তুলছে।

আন্তর্জাতিক টয়লেট সম্মেলনে উদ্বেগ

মঙ্গলবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত “ইন্টারন্যাশনাল টয়লেট কনফারেন্স ২০২৫”-এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বিশ্বব্যাপী পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আয়োজিত এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সরকারি নীতিনির্ধারক, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, দাতা সংস্থার সদস্য এবং উন্নয়ন সংস্থার বিশেষজ্ঞরা।

সম্মেলনে বক্তারা উল্লেখ করেন, নিরাপদ ও টেকসই পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে লাখো মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ক্ষতি

বিশেষজ্ঞদের মতে, অনুন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশ প্রতি বছর আনুমানিক ৪.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (দেশের মোট জিডিপির ১.৫%) ক্ষতির সম্মুখীন হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ সংকট আরও প্রকট হচ্ছে।

২০২৪ সালে ফেনীর ভয়াবহ বন্যার সময় হাজারো মানুষ নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। জরুরি অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করেছে, যার ফলে পানিদূষণ ও সংক্রামক রোগের প্রকোপ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন,
“শিশুদের স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠার অধিকার রয়েছে। কিন্তু নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকলে তাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ প্রচেষ্টায় টেকসই স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।”

ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন,
“শৌচাগার শুধু একটি প্রয়োজন নয়, এটি স্বাস্থ্য, মর্যাদা ও উন্নয়নের প্রতীক। প্রতিটি শিশুর স্কুলে টিকে থাকার জন্য শৌচাগার প্রয়োজন, নারীদের নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা প্রয়োজন, এবং আমাদের গ্রহকে রক্ষা করতে হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন ঘটাতেই হবে।”

তিনি আরও বলেন,
“এই সম্মেলন শুধু একটি আলোচনা নয়, বরং এটি আমাদের পুরোনো অভ্যাসকে চ্যালেঞ্জ জানায় এবং উদ্ভাবনী সমাধান গ্রহণের আহ্বান জানায়।”

দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন আগামীকাল শেষ হবে। বিশেষজ্ঞরা আশা প্রকাশ করেছেন, সম্মেলনে গৃহীত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে নিরাপদ ও টেকসই পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

 

শেয়ার করুন