১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার
৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওষুধের দর নির্ধারণী কমিটির সামর্থ্য নেই: ড. হামিদ

শেয়ার করুন

বাংলাদেশে ওষুধের দাম প্রায়ই অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে, যা নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষের জন্য বড় ধরনের সংকট তৈরি করেছে। জরুরি ওষুধের মধ্যে মাত্র ১১৭টির দাম সরকার নির্ধারণ করলেও বাকিগুলোর মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব ওষুধ কোম্পানিগুলোর হাতে। ফলে বাজারে অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

ওষুধের দাম বাড়ার কারণ

১. সরকারি নিয়ন্ত্রণের অভাব – নির্ধারিত ১১৭টি ওষুধের দাম সরকার ঠিক করলেও নিয়মিত মূল্য পুনঃনির্ধারণ হয় না, ফলে কোম্পানিগুলো এসব ওষুধ উৎপাদন থেকে সরে যাচ্ছে।

২. কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি – ওষুধ তৈরির অ্যাকটিভ ও প্যাসিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট আমদানি নির্ভর, যার দাম বাড়লে উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়।

৩. মুনাফার উচ্চ আকাঙ্ক্ষা – অনেক কোম্পানি অপ্রয়োজনীয় উপাদান পরিবর্তন করে নতুন নামে ওষুধ তৈরি করে, যাতে বেশি লাভ করা যায়।

৪. অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং – কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের বিভিন্ন উপহার ও আর্থিক সুবিধা দেয়, যা ওষুধের খরচে যুক্ত হয়।

৫. সরকারি নীতির দুর্বলতা – দাম নির্ধারণে কোনো স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান নেই, এবং সরকারের বিদ্যমান কমিটিতে পর্যাপ্ত দক্ষতা ও সক্ষমতা নেই।

 

ওষুধের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের উপায়

১. ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি গঠন –

স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ওষুধের দাম নির্ধারণ করা।

প্রতি ২-৩ বছর অন্তর মূল্য পুনর্নির্ধারণ নিশ্চিত করা।

 

২. ফর্মুলা ভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ –

উৎপাদন খরচ, আমদানি খরচ ও লাভের হার বিবেচনা করে যৌক্তিক দাম নির্ধারণ।

 

৩. দাম বৃদ্ধির সীমা নির্ধারণ –

দুই বছর পরপর সর্বোচ্চ ৫-১০% বৃদ্ধির নিয়ম চালু করা।

 

৪. অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং বন্ধ করা –

ওষুধ কোম্পানিগুলো যেন বাড়তি দামের মাধ্যমে ডাক্তারদের সুবিধা না দিতে পারে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হলে সরকারকে নীতিগত পরিবর্তন আনতে হবে। একটি স্বতন্ত্র অথরিটি গঠন, নিয়মিত মূল্য পুনর্বিবেচনা এবং অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং বন্ধের মাধ্যমে বাজারকে স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। তা না হলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যয় ক্রমাগত বাড়তে থাকবে, যা তাদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগকে সংকুচিত করবে।

 

শেয়ার করুন