১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাতৃভাষার জন্য জীবনদানের এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন

শেয়ার করুন
আমরা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী: প্রধান উপদেষ্টা

 

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য বাঙালিকে অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। মাতৃভাষার জন্য জীবনদানের ইতিহাস পৃথিবীতে বিরলএমনটাই বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

মাতৃভাষার গুরুত্ব ও ভাষা আন্দোলনের চেতনা

ড. ইউনূস বলেন, ভাষা আন্দোলনের চেতনা শুধু বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, বরং স্বাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির প্রতীক। ২১ ফেব্রুয়ারি শুধুমাত্র বেদনার্ত অতীত স্মরণ করার দিন নয়, বরং এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞার দিন।

তিনি বলেন, ২০০১ সালের ১৫ মার্চ ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়, যা বিশ্বের সব মাতৃভাষার সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও গবেষণার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

ভাষা, পরিচয় ও সামাজিক বাস্তবতা

ড. ইউনূস বলেন, মাতৃভাষা প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর ইতিহাস, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বাহক। মানুষ যত ভাষাই শিখুক, তার মাতৃভাষার সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক কখনো নষ্ট হয় না।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বহু দেশে বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বসবাস করলেও তাদের মাতৃভাষা কখনো বিলীন হয় না। তারা নিজেদের মধ্যে একত্রিত হলেই মাতৃভাষায় ফিরে যায় এবং নিজেদের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল সৃষ্টি করে।

তিনি আরও বলেন, একটি নতুন ভাষা শেখা মানেই মাতৃভাষায় দুর্বল হয়ে যাওয়া নয়। পৃথিবীর অনেক দেশে এক ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই একাধিক ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত।

ভাষা ও প্রযুক্তির সম্পর্ক

ড. ইউনূস বলেন, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর ভাষা নিয়ন্ত্রণ করবে প্রযুক্তি। যে দেশের প্রযুক্তি বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করবে, সেই দেশের ভাষাও জনপ্রিয়তা পাবে।

তিনি অতীতের উদাহরণ টেনে বলেন,

স্পুটনিক মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর বিশ্বজুড়ে রুশ ভাষা শেখার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল।

চীন প্রযুক্তিতে এগিয়ে আসার পর চীনা ভাষার চাহিদা বেড়েছে।

তিনি বলেন, যে জাতি উন্নতি করবে, তার ভাষাও সম্মান পাবে। শুধুমাত্র ভাষার প্রচার করলেই হবে না, বরং প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে ভাষার প্রভাব বাড়াতে হবে।

মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ ভাবনা

ড. ইউনূস বলেন, আজকের দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা করা উচিত সব মাতৃভাষা সংরক্ষণ করা। কারণ, আমরা জানি না কোন অজ্ঞাত মাতৃভাষা একদিন বিশ্বকে বদলে দেবে।

তিনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সফলতা কামনা করে বলেন, আমাদের মাতৃভাষার প্রচার ও সংরক্ষণ কেবল আবেগের বিষয় নয়, বরং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

শেয়ার করুন