১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৮ বছর পর ফেরা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অজানা টুকিটাকি গল্প

শেয়ার করুন

ক্রিকেটের সবচেয়ে অনিয়মিত কিন্তু আকর্ষণীয় আসরগুলোর মধ্যে অন্যতম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এটি এমন এক টুর্নামেন্ট যা বহু কিংবদন্তির জন্য আইসিসি শিরোপার আক্ষেপ মেটানোর সুযোগ করে দিয়েছে। ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিসের একমাত্র আইসিসি স্বীকৃত ট্রফি এটাই।

বাংলাদেশের আইসিসি টুর্নামেন্টে সেরা অর্জনের গল্পেও রয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অবদান। আর পাকিস্তানের জন্য ২০২৫ সালের আসর শুধুমাত্র একটি টুর্নামেন্টই নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঘরের মাটিতে ফিরে আসার বড় উপলক্ষ। ১৯৯৬ সালের পর প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো বৈশ্বিক আসর ফিরছে লাহোর, করাচি ও রাওয়ালপিন্ডির ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামে।

তবে ব্যাট-বলের লড়াইয়ের আগে দেখে নেওয়া যাক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির কিছু অজানা অধ্যায়—

বিশ্বায়ন থেকে বাণিজ্যিকীকরণ

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। তখন এর মূল লক্ষ্য ছিল সহযোগী দেশগুলোতে ক্রিকেট উন্মাদনা ছড়িয়ে দেওয়া। সে কারণেই প্রথম আসর আয়োজন করা হয়েছিল বাংলাদেশে। সেই আসর নিজের করে নেন দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস— ব্যাটে-বলে শাসন করে দলকে এনে দেন প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র আইসিসি শিরোপা।

প্রথম আসরের আনুষ্ঠানিক নাম ছিল “উইলস ইন্টারন্যাশনাল কাপ”। তবে নকআউট ফরম্যাটের কারণে পরেরবার এটি পরিচিত হয় “আইসিসি নকআউট ট্রফি” নামে। জনপ্রিয়তা বাড়ায় এটিকে ২০০۲ সালে “চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি” নামে পুনঃব্র্যান্ডিং করা হয়।

পরিবর্তন ও পালাবদল

২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতি দুই বছর পরপর নিয়মিতভাবে আয়োজিত হয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ২০০৮ সালের আসরটি হওয়ার কথা ছিল পাকিস্তানে, কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে তা পিছিয়ে ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজন করা হয়।

এরপর থেকে এটি চার বছরের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত হতে থাকে। ২০১৩ ও ২০১৭ সালে আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু ২০১৮ সালে আইসিসি সিদ্ধান্ত নেয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আর থাকবে না। তবে ২০২১ সালে আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ঘোষণা দেওয়া হয়, ২০২৫ সাল থেকে নতুন করে শুরু হবে টুর্নামেন্টটি।

নতুন চ্যাম্পিয়নদের জন্ম

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অনেক কিংবদন্তির একমাত্র আইসিসি শিরোপা হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। যেমন—

ভারত: সৌরভ গাঙ্গুলি (২০০২), রাহুল দ্রাবিড় ও ভিভিএস লক্ষ্মণ (২০০২)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ব্রায়ান লারা, শিবনারায়ণ চন্দরপল ও রামনারেশ সারওয়ান (২০০৪)

দক্ষিণ আফ্রিকা: জ্যাক ক্যালিস, হ্যান্সি ক্রনিয়ে ও জন্টি রোডস (১৯৯৮)

নিউজিল্যান্ড: স্টিফেন ফ্লেমিং ও ক্রিস ক্রেয়ান্স (২০০০)

পাকিস্তান: বাবর আজম (২০১৭)

এমনকি ২০১১ সালে বিশ্বকাপ জেতার আগে শচীন টেন্ডুলকারের একমাত্র আইসিসি অর্জনও ছিল ২০০২ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।

ডার্ক হর্সদের সাফল্যের আসর

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ডার্ক হর্স বা অপ্রত্যাশিত দলগুলোর সাফল্যের নজির রয়েছে বহুবার—

১৯৯৮: দক্ষিণ আফ্রিকা চ্যাম্পিয়ন

২০০০: নিউজিল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন

২০০৪: ওয়েস্ট ইন্ডিজ চ্যাম্পিয়ন

২০১৭: পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন

২০২৫ সালের আসরেও এমন চমকের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মতো দলগুলোর জন্য এটি হতে পারে নিজেদের প্রমাণের মঞ্চ। তাছাড়া, অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন তারকা ক্রিকেটারের না থাকা এবং ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহর অনুপস্থিতি নতুন চ্যাম্পিয়নের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫: পাকিস্তানের জন্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ

আইসিসির এই টুর্নামেন্ট ৮ বছর পর ফিরছে, আর আয়োজক পাকিস্তান। করাচি, লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডি তিন শহরে আয়োজিত হবে প্রতিটি ম্যাচ, যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে কঠোর। পাকিস্তানের জন্য এটি কেবল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্বাগত আয়োজনই নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধারের বড় সুযোগও।

২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি কি আবার কোনো নতুন চ্যাম্পিয়নের জন্ম দেবে? নাকি পুরোনো পরাশক্তিদের হাতেই উঠবে ট্রফি? উত্তর মিলবে আর কিছুদিন পরই!

 

শেয়ার করুন