১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গুড় কি চিনির চেয়ে স্বাস্থ্যকর?

শেয়ার করুন

 

বর্তমানে মানুষ স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ব্যাপারে আরও সচেতন হয়ে উঠছে। বিশেষ করে প্রাকৃতিক ও অপ্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। গুড় একটি প্রাচীন মিষ্টি, যা পরিশোধিত চিনির তুলনায় স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়। ডায়াবেটিস ও স্থূলতার মতো জীবনধারাসংক্রান্ত রোগ সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান সচেতনতার কারণে অনেকেই এখন চিনির পরিবর্তে গুড় বেছে নিচ্ছেন। যদিও উভয়ই আখ বা তালের রস থেকে উৎপন্ন, তবে গুড় ন্যূনতম প্রক্রিয়াজাত হওয়ায় এটি চিনির তুলনায় বেশি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর।

গুড়ের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

গুড় আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এ কারণে এটি চিনির তুলনায় বেশি পুষ্টিকর। গুড়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

গুড়ের অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা:
হজমশক্তি উন্নত করে – গুড় হজমকারী এনজাইমগুলোর কার্যকারিতা বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়া সহজ করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক – এতে থাকা পটাসিয়াম ও সোডিয়াম শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক – আয়রনের ভালো উৎস হওয়ায় গুড় রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক।

গুড়ের কিছু অসুবিধা

গুড় পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ হলেও এতে উচ্চ ক্যালোরি রয়েছে। অতিরিক্ত গুড় গ্রহণ করলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া গুড়ের প্রভাব রক্তে শর্করার মাত্রায় ওঠানামা ঘটাতে পারে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এটি সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

এছাড়া, অস্বাস্থ্যকরভাবে তৈরি করা গুড় অনেক সময় দূষণযুক্ত হতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

পরিশোধিত চিনি: কেন এটি কম স্বাস্থ্যকর?

চিনি অত্যধিক প্রক্রিয়াজাত হওয়ার কারণে এতে থাকা প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজ অপসারিত হয়ে যায়। ফলে এটি কেবল ফাঁকা ক্যালোরি সরবরাহ করে এবং ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

চিনির নেতিবাচক দিক:
ইনসুলিন প্রতিরোধ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়
রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে ক্লান্তি ও ক্ষুধা বৃদ্ধি করে
স্থূলতা, হৃদরোগ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে

গুড় ও চিনির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) তুলনা

গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) হলো এমন একটি সূচক, যা নির্ধারণ করে কোনো খাবার কত দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়।

পরিশোধিত চিনির GI প্রায় ৬৫

গুড়ের GI তুলনামূলক কম, প্রায় ৫০-৫৫

যদিও গুড়ের GI চিনির তুলনায় কিছুটা কম, তবে এটি এখনো উচ্চ GIযুক্ত খাবারগুলোর মধ্যে পড়ে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের গুড়ও নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খাওয়া উচিত।

কোনটি ভালো – গুড় নাকি চিনি?

স্বাস্থ্য ও পুষ্টির দিক থেকে গুড় চিনির তুলনায় ভালো বিকল্প, কারণ এটি প্রাকৃতিক এবং এতে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। তবে অতিরিক্ত গুড় খাওয়া ওজন বৃদ্ধি এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে, তাই এটি পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করাই ভালো।

সুস্থ থাকার জন্য আরও স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে:
মধু
খেজুরের রস
স্টেভিয়া (প্রাকৃতিক চিনি বিকল্প)

অতএব, পরিমিত গুড় গ্রহণ করলে এটি চিনির তুলনায় ভালো বিকল্প হতে পারে, তবে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর জীবনধারার জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।

 

শেয়ার করুন