
ঢোল পিটিয়ে খবর প্রচারের দিন পেরিয়ে কাগজ, প্রিন্টিং প্রেস, রেডিও, টেলিভিশনের পথ ধরে এখন মানুষের হাতে মোবাইল ফোন। যুগে যুগে সংবাদ পরিবেশনের ধরনে এসেছে পরিবর্তন, আর সেই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসেছে নতুন সব প্রযুক্তি।
ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে অনলাইন গণমাধ্যমের চিত্রও দ্রুত বদলেছে। কেবল লেখা বা স্থিরচিত্র এখন যথেষ্ট নয়; বরং পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে ভিডিও ও মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট আধুনিক গণমাধ্যমের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
ভিজুয়াল কন্টেন্টের জনপ্রিয়তার কারণ
১. সহজে মনোযোগ আকর্ষণ
গবেষণা বলছে, মানুষের মস্তিষ্ক লেখা পড়ার চেয়ে ছবি ও ভিডিও দ্রুত প্রক্রিয়া করতে পারে। ফলে পাঠক ও দর্শক ভিজুয়াল কন্টেন্টের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। শব্দ, চিত্র ও চলমান দৃশ্য একসঙ্গে থাকার কারণে খবর আরও স্পষ্ট ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
২. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আধিপত্য
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে ভিজুয়াল কন্টেন্ট বেশি দেখা ও শেয়ার করা হয়। এসব প্ল্যাটফর্মের অ্যালগরিদমও ভিডিও ও চিত্রভিত্তিক কন্টেন্টকে অগ্রাধিকার দেয়।
৩. সার্চ ইঞ্জিনের গুরুত্ব
গুগল এখন ভিডিও কন্টেন্টকে আরও বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। ইউটিউব ভিডিও অনেক সময় গুগল সার্চের প্রথম পাতায় আসে, যা ব্র্যান্ড ও সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে।
৪. দ্রুত তথ্য গ্রহণের সুবিধা
আজকের ব্যস্ত জীবনে মানুষ দীর্ঘ লেখা পড়ার চেয়ে সংক্ষিপ্ত ভিডিও বা ইনফোগ্রাফিক দেখে দ্রুত তথ্য নিতে পছন্দ করে।
অনলাইন মিডিয়ায় ভিডিওর ভূমিকা
১. সংবাদমাধ্যমে ভিডিও
অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোতে ভিডিও কনটেন্টের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ভিডিও সংবাদ পাঠকদের ঘটনাস্থলের আরও কাছাকাছি নিয়ে যায়। লাইভ নিউজ ব্রডকাস্টিং ও ব্রেকিং নিউজের ক্ষেত্রে ভিডিও এখন অপরিহার্য।
২. শিক্ষা ও ই-লার্নিং
ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম যেমন ইউটিউব, কোর্সেরা, ইউডেমিতে শিক্ষামূলক ভিডিওর চাহিদা বাড়ছে। বিশ্বের উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করছে এসব প্ল্যাটফর্ম।
৩. ডিজিটাল মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং
প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিজ্ঞাপন ও পণ্যের প্রচারের জন্য ভিডিও কনটেন্টে বেশি বিনিয়োগ করছে, যা গ্রাহকদের সঙ্গে তাদের সংযোগ আরও দৃঢ় করছে।
৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইন্টারঅ্যাকশন
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্ম ভিজুয়াল কন্টেন্টকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ভিডিও পোস্টের এনগেজমেন্ট লেখা বা ছবির তুলনায় অনেক বেশি।
ভিজুয়াল কন্টেন্টের ভবিষ্যৎ
ভবিষ্যতে অনলাইন মিডিয়ায় ভিজুয়াল কন্টেন্টের গুরুত্ব আরও বাড়বে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) ও অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) প্রযুক্তি আধুনিক মিডিয়াকে আরও উন্নত করবে।
১. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও ভিডিও কন্টেন্ট
AI-এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় ভিডিও সম্পাদনা, অ্যানিমেশন তৈরি ও ভয়েসওভার সহজতর হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত AI প্রযুক্তি ভিডিওর গুণগতমান বাড়াবে।
২. ভার্চুয়াল ও অগমেন্টেড রিয়েলিটি
VR ও AR প্রযুক্তি অনলাইন গেমিং, ই-লার্নিং, সংবাদমাধ্যম ও বিজ্ঞাপনে বিপ্লব ঘটাবে।
৩. লাইভ স্ট্রিমিং ও ইন্টারঅ্যাকটিভ ভিডিও
লাইভ স্ট্রিমিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ভবিষ্যতে ইন্টারঅ্যাকটিভ লাইভ স্ট্রিমিং প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের আরও সম্পৃক্ত করবে।
৪. সংক্ষিপ্ত ভিডিওর উত্থান
টিকটক, ইউটিউব শর্টস ও ফেসবুক রিলসের জনপ্রিয়তা ইঙ্গিত দেয় যে ছোট দৈর্ঘ্যের ভিডিও ভবিষ্যতে আরও আধিপত্য বিস্তার করবে।
৫. ব্যক্তিগতকৃত ভিডিও কন্টেন্ট
এআই-ভিত্তিক সুপারিশ ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর পছন্দ অনুযায়ী ভিডিও সাজেস্ট করা হবে, যা কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
৬. স্বয়ংক্রিয় ভিডিও তৈরি প্রযুক্তি
অল্প সময়ে ও কম খরচে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানসম্মত ভিডিও তৈরি করা সম্ভব হবে, যা কন্টেন্ট নির্মাতাদের জন্য বড় সুবিধা আনবে।
অনলাইন গণমাধ্যম এখন কেবল লেখা বা স্থিরচিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; বরং ভিডিও ও অন্যান্য ভিজুয়াল উপাদানই আধুনিক মিডিয়ার মূল চালিকাশক্তি। বহু প্রিন্ট মিডিয়াও এখন ভিডিও কনটেন্টের দিকে ঝুঁকছে।
ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও স্বয়ংক্রিয় ভিডিও তৈরির প্রযুক্তির উন্নতি অনলাইন মিডিয়ার ভিজুয়াল অভিজ্ঞতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।