১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সেশনজটের শঙ্কায় ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

শেয়ার করুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগ বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। ‘লস রিকভারি প্ল্যান’ অমান্য, সময়মতো ইনকোর্স ও সেমিস্টার পরীক্ষা না নেওয়া, ফল প্রকাশে বিলম্ব এবং শিক্ষক সংকটের মতো অভিযোগে বিভাগটি বিপর্যস্ত। এর ফলে ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থীরা সেশনজটের শঙ্কায় রয়েছেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের তুলনায় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থীরা ছয় মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে রয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ইংরেজি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইতিহাস, আরবি, পালি অ্যান্ড বুদ্দিস্ট স্টাডিজসহ বেশকিছু বিভাগের শিক্ষার্থীরা ষষ্ঠ সেমিস্টার শেষ করেছেন। এমনকি উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থীরা চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে অষ্টম সেমিস্টার পরীক্ষা দিয়ে অনার্স শেষ করতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থীরা মাত্র পঞ্চম সেমিস্টারের ফল পেয়েছেন এবং ষষ্ঠ সেমিস্টারের ইনকোর্স পরীক্ষা এখনো সম্পন্ন হয়নি।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগের ধীরগতির কারণে তাদের ক্যারিয়ার ও চাকরিজীবনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার না মানা, নিয়মের অবহেলা এবং শিক্ষকদের আন্তরিকতার ঘাটতিকে এর জন্য দায়ী করছেন। এছাড়া, বিভাগে শিক্ষক সংকটও চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে বিভাগে ২৭ জন শিক্ষক থাকলেও তাদের মধ্যে মাত্র ৮ জন ক্লাস নিচ্ছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষক প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন, যা তাদের ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে।

শিক্ষার্থীরা দ্রুত পঞ্চম সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশ এবং ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ নিয়ে তারা বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কয়েক দফা সাক্ষাৎ করেছেন এবং লিখিত আবেদনও জমা দিয়েছেন। তবে এখনো কোনো সন্তোষজনক সমাধান পাওয়া যায়নি।

বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. ফাতেমা রেজিনা ইকবাল বলেছেন, এই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই পিছিয়ে ছিল এবং নতুন প্রশাসন তাদের এগিয়ে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে বিভাগে নতুন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে এবং সংকট সমাধানের জন্য কাজ করা হচ্ছে।

শিক্ষক সংকটের বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রাশেদা ইশরাদ নাছির বলেছেন, বিভাগে নতুন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং আশা করা যায় যে শীঘ্রই এই সংকট সমাধান হবে।

ঢাবির উপ-উপাচার্য শিক্ষা অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেছেন, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তার কাছে সরাসরি কোনো অভিযোগ না আসায় তিনি বিষয়টি নিয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারেননি। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে বিভাগটি দ্রুত নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সংকট সমাধান করবে।

শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছেন যে সময়মতো অনার্স শেষ করতে না পারলে তাদের চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হবে না। তারা বিভাগের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছেন এবং ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন