
ফাজায়েলে আমাল: এক অনন্য ইসলামী সাহিত্য সংকলন
দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আলেম ও সাধারণ মুসলমানদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় একটি কিতাব হলো ফাজায়েলে আমাল। এটি মূলত পৃথক নয়টি মূল্যবান কিতাবের সমষ্টি, যা রচনা করেছেন শাইখুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মাদ জাকারিয়া কান্ধলভি (রহ.)।
প্রথমদিকে, তাবলিগের জিম্মাদারগণ দাওয়াতি কাজে বের হওয়া জামাতের সাথীদের জন্য এই কিতাবগুলো নির্বাচন করেন। প্রাথমিকভাবে এটি “তাবলিগি নেসাব” নামে প্রকাশিত হলেও, পরবর্তীতে বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বিবেচনায় “ফাজায়েলে আমাল” নামে প্রকাশ করা হয়।
ফাজায়েলে আমাল-এর অন্তর্ভুক্ত নয়টি কিতাব
১. ফাজায়েলে নামাজ (১৩৫৮ হিজরি, ৭ মুহাররম) – হজরত ইলিয়াস (রহ.)-এর অনুরোধে লেখা।
2. ফাজায়েলে কোরআন মাজিদ (১৩৪৮ হিজরি, জিলহজ) – শাহ ইয়াসিন (রহ.)-এর অনুরোধে রচিত।
3. ফাজায়েলে রমজান (১৩৪৯ হিজরি, রমজান) – মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)-এর অনুরোধে লেখা।
4. ফাজায়েলে হজ (১৩৬৬-১৩৬৭ হিজরি) – মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি (রহ.)-এর অনুরোধে রচিত।
5. ফাজায়েলে সাদাকাত (১৩৬৮ হিজরি, ২২ সফর) – মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)-এর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা।
6. ফাজায়েলে জিকির (১৩৫৮ হিজরি, ২৬ শাওয়াল) – মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)-এর অনুরোধে রচিত।
7. ফাজায়েলে দুরুদ শরিফ (১৩৮৪ হিজরি, ২৫ রমজান – ৬ জিলহজ) – শাহ ইয়াসিন (রহ.)-এর অনুরোধে লেখা।
8. ফাজায়েলে তাবলিগ (১৩৫০ হিজরি, ৫ সফর) – মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)-এর অনুরোধে রচিত।
9. হেকায়াতে সাহাবা (১৩৫৭ হিজরি, শাওয়াল) – শাহ আব্দুল কাদের রায়পুরী (রহ.)-এর অনুরোধে লেখা।
রচনার পটভূমি ও গুরুত্ব
এই কিতাবগুলোর বেশিরভাগই কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই রচিত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের অনুরোধে শাইখুল হাদিস (রহ.) এসব গ্রন্থ রচনা করেন। তার অসুস্থতার সময়েও তিনি “হেকায়াতে সাহাবা” রচনা করেন, যা ইসলামের প্রথম যুগের সাহাবিদের জীবনচরিত ও ত্যাগের অনন্য দলিল।
বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত ফাজায়েলে আমাল ইসলামী জ্ঞান ও আত্মশুদ্ধির ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে। এটি শুধু তাবলিগ জামাতের অনুসারীদের জন্য নয়, বরং সকল মুসলমানদের জন্য উপকারী একটি গ্রন্থ।
সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদভি (রহ.) বলেন—
“এর দ্বারা ইলমি ও দীনি যে উপকার সাধিত হয়েছে, তা বিবেচনায় নিলে এটা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, এই কিতাবসমূহ দ্বারা আল্লাহর হাজার হাজার পথহারা বান্দা বেলায়েতের স্তরে পৌঁছে গেছে।”