
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) মাগরিবের নামাজ শেষে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এবারের ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। ভারতের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ান শুরু করেছেন।
তার উর্দুতে দেওয়া বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের।
ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। তাবলিগ জামাতের শুরায়ি নেজামের তত্ত্বাবধানে অর্থাৎ মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমা করছেন। নির্ধারিত সময়ের ১২ ঘণ্টা আগেই এবার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো ইজতেমার। আগামীকাল শুক্রবার বাদ ফজর বয়ান করবেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। সকাল ১০টায় বিভিন্ন খিত্তায় তালিমের আমল শুরু হবে।
এবার দুই পর্বে ইজতেমার আয়োজন করেছে শুরায়ি নেজাম। ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম ধাপ এবং ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হবে।
ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর বিষয়টি জানিয়েছেন তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান। তিনি বলেন, ‘তাবলীগ জামাতের শুরায়ি-নেজামের সমন্বয়ে আয়োজিত এবারের ইজতেমার প্রথম পর্বে দেশ-বিদেশের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশগ্রহণের আশা করা হচ্ছে। আগামী তিন দিনব্যাপী চলা এ আয়োজনের শেষ দিন রবিবার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ শেষ হবে। ইজতেমার প্রথম পর্বে মুসল্লিদের আগমন ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে মুসল্লিরা টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আসছেন। বিদেশি মেহমানেরাও আসতে শুরু করেছেন।’
হাবিবুল্লাহ রায়হান আরও বলেন, ‘এবারের ইজতেমা দুটি ধাপে হবে। দুটি ধাপই শুরায়ি নেজামের তত্ত্বাবধানে হবে। প্রথম ধাপে ৪১টি জেলা এবং ঢাকার একাংশ অংশগ্রহণ করবে আর দ্বিতীয় ধাপে অংশগ্রহণ করবে ২২টি জেলা এবং ঢাকার বাকি অংশ।’
শুক্রবার ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আজ থেকে শুরুর কারণ সম্পর্কে হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, ‘আমরা আরবি তারিখ অনুসরণ করি। মাগরিবের নামাজের পরপরই অর্থাৎ সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে আরবি তারিখ পরিবর্তিত হয়। সে হিসাবে শুক্রবার শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আজ বাদ মাগরিব শুরু হয়েছে ইজতেমা।’
তিনি বলেন, ‘টঙ্গী মাঠের ১৬০ একর জায়গায় আমাদের অবস্থান করাটা খুবই কষ্টদায়ক হয়ে যায়। গত কয়েক বছর শুরায়ি নেজামের অধীনে যে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছে আমাদের সাথীরা স্থায়ী টয়লেটের ছাদগুলোর ওপরে, আশপাশের ছোট ছোট মাঠগুলোর ভেতরে এবং সড়কে ধুলাবালুর ভেতর কষ্ট করে অবস্থান করেছেন। এবার দুই ধাপে ইজতেমা হওয়ায় আমাদের কষ্ট কিছুটা হলেও কম হবে।’
এদিকে, ইজতেমা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার এমএন নাসির উদ্দিন বলেন, ‘কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে থাকবে ইজতেমা ময়দান। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য ময়দান ও আশপাশের এলাকায় ২২৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। ইজতেমা উপলক্ষে সাত হাজার পুলিশ সদস্য পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নিয়োজিত থাকবেন। পাশাপাশি নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে র্যাব ও সেনাবাহিনী।’
টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবর ইসকান্দার বলেন, ‘আশা করছি প্রতি বছরের মতো এবারও শান্তিপূর্ণভাবে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে রয়েছেন।’
……