১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ বিশ্বকে কীভাবে প্রভাবিত করবে?

শেয়ার করুন

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নিতে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার এই প্রত্যাবর্তন বৈশ্বিক রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

ধারণা করা হচ্ছে, তিনি তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডা আরও জোরদারভাবে বাস্তবায়ন করবেন। এর ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলোর পুনর্গঠন হতে পারে। এতে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে

ইউক্রেন

নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ‘একদিনের মধ্যে’ শেষ করতে পারবেন। তবে কীভাবে তা করবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
তিনি ইউক্রেনে সেনা সহায়তার কড়া সমালোচক এবং বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে এ ধরনের ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হবে না। তার সহযোগী কিথ কেলোগ বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০০ দিনের মধ্যে যুদ্ধ থামানো হবে।

ন্যাটো

ন্যাটো দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্পের সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তার মতে, ইউরোপের দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় না করলে যুক্তরাষ্ট্রকেও আর্থিক চাপ বহন করা উচিত নয়। ন্যাটোর সদস্যদের তাদের জাতীয় আয়ের ৫% প্রতিরক্ষায় ব্যয়ের আহ্বান করেছেন তিনি।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, তিনি ন্যাটোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্ব কমিয়ে দিতে পারেন, এমনকি ইউরোপে মোতায়েনকৃত মার্কিন সেনা সংখ্যা হ্রাস করতে পারেন।

মধ্যপ্রাচ্য

গাজায় যুদ্ধবিরতির পর দায়িত্ব নেওয়ার পরও ট্রাম্পকে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
ইসরায়েলের প্রতি তার দৃঢ় সমর্থন এবং ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান পূর্বের মতোই থাকতে পারে। তবে সমঝোতার ভিত্তিতে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে পারেন তিনি।

চীন

ট্রাম্পের সময় যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় মেয়াদেও তিনি চীনা পণ্যের ওপর উচ্চ কর আরোপ করতে পারেন। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ছাড়াও তাইওয়ান নিয়ে উত্তেজনা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে বলেছেন, তাইওয়ান ইস্যুতে চীন যদি আক্রমণাত্মক আচরণ করে, তবে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন

ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনের ধারণার সমালোচক। তিনি গ্রিন এনার্জি ও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। তার নীতিকে বিশেষজ্ঞরা বৈশ্বিক জলবায়ু কার্যক্রমের জন্য হুমকিস্বরূপ মনে করেন।

অভিবাসন

অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে ট্রাম্পের কঠোর মনোভাব রয়েছে। তিনি জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নীতি পরিবর্তন করতে পারেন এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কিছু দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিতে পারেন।

গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খাল

গ্রিনল্যান্ড কেনার ইচ্ছা এবং পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মন্তব্য নিয়ে ট্রাম্প সমালোচিত হয়েছেন। যদিও এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ক্ষীণ, তবে তার বক্তব্য মার্কিন বৈশ্বিক শক্তি প্রদর্শনের প্রতিফলন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তার নীতিগুলো কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, প্রতিরক্ষা খাতের সংস্কার, অভিবাসন নীতি কঠোর করা, এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত।

 

শেয়ার করুন