
লবণাক্ত জমিতে সবজি চাষ করে ভাগ্য ফিরেছে বরগুনার চাষিদের
বরগুনার তালতলী উপজেলার সওদাগর পাড়া গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক চাষি লবণাক্ত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে সক্ষম হয়েছেন। এক সময় এই জমিগুলো ধানের জন্য অনুপযুক্ত ছিল, তবে বর্তমানে এসব জমি থেকে বছরে প্রায় ৭ কোটি টাকার সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। এ কারণেই গ্রামটি এখন পরিচিতি পেয়েছে “সবজি গ্রাম” নামে।
পরিবর্তনের সূচনা
এক যুগ আগে শাহাদাত মাতুব্বর নামের এক স্থানীয় চাষি বিশেষ পরিচর্যায় সবজি চাষ শুরু করেন। তার সাফল্য দেখে অন্যান্য চাষিরা ধান চাষের পরিবর্তে সবজি চাষে মনোযোগ দেন। বর্তমানে গ্রামের সাড়ে ৬০০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে।
সবজি চাষের প্রভাব
গ্রামের অনেক পরিবার, যারা একসময় জীবিকার জন্য সংগ্রাম করত, এখন সবজি চাষের মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জন করেছে।
মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন: মাছ ধরার কাজ ছেড়ে সবজি চাষ শুরু করেন। বর্তমানে লাভের টাকায় জমি ও গরু কিনেছেন, সন্তানদের শিক্ষার খরচ চালাচ্ছেন।
নাজনীন বেগম: স্বামীর দিনমজুরির কাজের আয়ে সংসার চালানো কঠিন ছিল। সবজি চাষ শুরু করে তার বড় ছেলে মাস্টার্স পাস করেছে এবং পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে।
আব্দুল মান্নান ফকির: ধান চাষে লোকসানের মুখে পড়ায় সবজি চাষ শুরু করেন। এবার তার ক্ষেত থেকে প্রায় ৭ লাখ টাকার সবজি বিক্রির আশা করছেন।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি
সবজি চাষের মাধ্যমে শুধু চাষিদের নয়, এলাকার বেকার নারী-পুরুষদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন স্থানীয় এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার অনেক মানুষ দৈনিক ৩০০ টাকা পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে শিম ও অন্যান্য সবজি তোলার কাজে নিয়োজিত।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সি.এম রেজাউল করিম বলেন, লবণাক্ত জমি উঁচু করে সবজি চাষের মাধ্যমে এই গ্রামের কৃষকেরা নিজেদের ভাগ্য বদল করেছেন। তাদের সফলতা দেখে অন্যান্য এলাকার চাষিরাও সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ সবসময় প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
সওদাগর পাড়া গ্রামের সবজি চাষের সাফল্য শুধু স্থানীয় নয়, জাতীয়ভাবে উদাহরণ হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর গ্রামটি থেকে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে দেশব্যাপী কোটি টাকার সবজি সরবরাহ করা হচ্ছে, যা এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।