
আলুতে লাভের বদলে দেনা পরিশোধ নিয়েই দুশ্চিন্তা
দুই মাস আগেই বাজারে আলুর দাম ছিল ৭৫-৮০ টাকা প্রতি কেজি। এতে ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা ইউনিয়নের আলুচাষি শমসের আলী ৩৩ শতক জমিতে আলু চাষ করে ভালো লাভ করেছিলেন। সেই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে এবার এক একর জমিতে আলু চাষে মহাজন থেকে ঋণ নেন তিনি। তবে বাজারে আলুর দাম দ্রুত কমে যাওয়ায় এখন লাভ তো দূরে, দেনা পরিশোধ নিয়েই শঙ্কায় পড়েছেন।
২০ দিন আগে প্রতি কেজি আলু ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি করলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৪ টাকায়। শমসের আলীর মতো ঠাকুরগাঁওয়ের শত শত আলুচাষি এবার লোকসানের মুখে।
আলু চাষে ব্যাপক ক্ষতি
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর জেলায় ২৬,১৬৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছিল। এবার তা বেড়ে হয়েছে ৩৪,৫০০ হেক্টর। এর মধ্যে আগাম আলু চাষ হয়েছে ১,৫৫৫ হেক্টর জমিতে।
কৃষকেরা জানান, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বৃষ্টির কারণে বীজ নষ্ট হওয়ায় নতুন করে বীজ রোপণ করতে হয়েছে, যা চাষাবাদের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে।
সদর উপজেলার রুহিয়া এলাকার কৃষক আব্দুল হাকিম জানান, এক বিঘা জমিতে আলু চাষে তার খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। ২,৬০০ কেজি আলু পেয়েছেন, যার প্রতি কেজির খরচ দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকা। অথচ বিক্রি করতে হচ্ছে ১৩-১৪ টাকায়।
বালিয়াডাঙ্গীর কৃষক মাজেদুর রহমান জানান, তিন বিঘা জমিতে গ্র্যানুলা জাতের আলু চাষে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার টাকা। বিক্রি থেকে আয় হয়েছে মাত্র ৯৩,৬০০ টাকা। এতে তার ক্ষতি হয়েছে ৮৭,৪০০ টাকা।
সংরক্ষণের অভাব, দামের অবনতি
রানীশংকৈলের কৃষক নাজমুল বলেন, আগাম আলু হিমাগারে রাখা যায় না। ফলে দাম কমলেও বাধ্য হয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বালিয়া এলাকার কৃষক মোস্তফা বলেন, বাজারে দাম বাড়লে নানাজনের কথা শোনা যায়। কিন্তু দাম কমলে কারও কোনো পদক্ষেপ নেই।
কৃষি বিভাগের বক্তব্য
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার আলুর উৎপাদন ভালো হয়েছে, তবে খরচও বেশি হয়েছে। বাজারে দাম কম থাকায় কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, কৃষকরা একবার কোনো ফসলে লাভ পেলেই সবাই সেটির দিকে ঝোঁকেন। এবারও সেটি হয়েছে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকদের বড় ধরনের ক্ষতি হবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তবে বাস্তবতা হলো, কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন, আর ঋণ পরিশোধের চাপ তাদের আরও সংকটে ফেলছে।