
অমর একুশে বইমেলা ২০২৫: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির একটি অনন্য অনুষঙ্গ। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি ধরে রাখতে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে মাসব্যাপী এই মেলার আয়োজন করা হয়।
স্থান নিয়ে বিতর্ক এবং সমাধান
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে কেন্দ্র করে ‘সাংস্কৃতিক বলয়’ তৈরির পরিকল্পনার ফলে মেলার স্থান নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে জানানো হয়, ২০২৫ সালের বইমেলা শুধুমাত্র বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজন করতে হবে। বাংলা একাডেমি এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানায় এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা আয়োজনের জন্য নতুন করে আবেদন করে।
পরবর্তী সময়ে বাংলা একাডেমির অনুরোধের ভিত্তিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি নির্দিষ্ট অংশ শর্তসাপেক্ষে মেলা আয়োজনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।
আয়োজনের প্রস্তুতি
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের মতোই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণজুড়ে মেলা অনুষ্ঠিত হবে। স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের ক্ষেত্রে এবার নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে।
এছাড়া মেলার সুশৃঙ্খল এবং নান্দনিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগ্রহী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইনে এবং সরাসরি স্টল বরাদ্দের আবেদন করতে বলা হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী বইমেলার বিবর্তন
অমর একুশে বইমেলার যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সালে। চিত্তরঞ্জন সাহা একাই বইমেলার সূচনা করেন। পরবর্তী সময়ে বাংলা একাডেমি এই মেলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেয় এবং ২০১৪ সালে স্থান সংকুলানের কারণে মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারিত হয়।
সাংস্কৃতিক বলয় পরিকল্পনা
বাংলা একাডেমি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা বটমূল, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ও শিল্পকলা একাডেমিকে কেন্দ্র করে একটি সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই বলয়কে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার লক্ষ্যে এখানে সাহিত্য, সংগীত, শিল্পকলা, এবং প্রদর্শনীর মতো নানা আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
মেলার গুরুত্ব
অমর একুশে বইমেলা শুধু বই কেনা-বেচার স্থান নয়; এটি দেশের সাহিত্যপ্রেমী ও সংস্কৃতিমনা মানুষের মিলনমেলা। ভাষা আন্দোলনের চেতনা এবং বাংলা ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা জাগ্রত রাখতে এটি একটি শক্তিশালী মাধ্যম।
২০২৫ সালের মেলা আগের চেয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে এবং নতুন উদ্যমে আয়োজনের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে, যা বাঙালির সংস্কৃতির বিকাশে নতুন মাত্রা যোগ করবে।