
ভারতে খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা বন্ধে জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় নেতাদের আহ্বান
ভারতে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ৪০০ জনেরও বেশি জ্যেষ্ঠ নেতা ও ৩০টি চার্চ। দেশটিতে খ্রিষ্টানদের ওপর হামলা ও নির্যাতন বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) এই চিঠি পাঠানো হয় বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যার।
বড়দিনের সহিংসতা
চিঠিতে বলা হয়েছে, খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে এবং তা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বড়দিন (২৫ ডিসেম্বর) উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে খ্রিষ্টানদের অন্তত ১৪টি সমাবেশে হামলা, সহিংসতা ও হুমকির ঘটনা ঘটেছে।
সহিংসতার পরিসংখ্যান
ইভানজেলিক্যাল ফেলোশিপ অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে ৭২০টিরও বেশি সহিংসতার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। ইউনাইটেড ক্রিশ্চিয়ান ফোরামের তথ্যমতে, একই সময়ে ৭৬০টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
ধর্মান্তরবিরোধী আইনের অপব্যবহার
খ্রিষ্টান নেতাদের অভিযোগ, ধর্মান্তরবিরোধী আইনকে ব্যবহার করে খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি হুমকি বাড়ছে, ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের প্রবণতা বাড়ছে এবং দলিত খ্রিষ্টানরা তফসিলি জাতির মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মণিপুরের সংকট
২০২৩ সালের মে মাস থেকে চলমান মণিপুরের সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ২৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, ৩৬০টি গির্জা ধ্বংস হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। এই পরিস্থিতি নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতারা।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান
চিঠিতে খ্রিষ্টান নেতারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনায় দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তারা সংবিধান অনুযায়ী ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় রাজ্য সরকারগুলোকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
নেতারা আরও বলেন, “ভারতের নৈতিক কাঠামো, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামাজিক ঐক্যের জন্য সব ধর্মের অন্তর্ভুক্তি ও সম্প্রীতি অপরিহার্য।” নিয়মিত আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও নাগরিকদের ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
স্বাক্ষরকারী নেতারা
এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মাস আব্রাহাম, রিচার্ড হাওয়েল, মেরি স্কারিয়া, ডেভিড ওনেসিমু, জোয়াব লোহারা, সেডরিক প্রকাশ এস. জে., জন ডায়াল, জেলহো কিহো, প্রকাশ লুইস এস. জে., অ্যালেন ব্রুকস, ই. এইচ. খারখংগর, কে. লসই মাও, বিজয়েশ লাল, মাইকেল উইলিয়ামস, এ. সি. মাইকেল, অখিলেশ এডগারসহ অনেকে।
এই সহিংসতার ঘটনায় ভারতের ধর্মীয় সহিষ্ণুতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা আবারও স্পষ্ট হয়েছে।