
টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতি বিতর্কে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশে একটি আর্থিক দুর্নীতির মামলার তদন্তে যুক্তরাজ্যের অর্থ ও নগরবিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবি উঠলেও, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার তার প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন। সোমবার লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে স্টারমার বলেন, “টিউলিপ সিদ্দিক তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন এবং আমি তার প্রতি আস্থা রাখি।”
দুর্নীতির অভিযোগ
৪২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্বে রয়েছেন। বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগে তিনি এবং তার পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
এ অভিযোগে বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক ২০১৩ সালে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন, যেখানে প্রকল্পের ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছিল।
ফ্ল্যাট বিতর্ক
সম্প্রতি লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। ২০০৪ সালে বাংলাদেশি ডেভেলপার আবদুল মোতালিফ ফ্ল্যাটটি উপহার হিসেবে টিউলিপকে দেন বলে অভিযোগ। ফ্ল্যাটটির বর্তমান বাজারমূল্য এবং উপহার প্রদানের প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, ২০০১ সালে ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ডে (প্রায় ২.৯ কোটি টাকা) মোতালিফ ফ্ল্যাটটি কেনেন, যা পরে টিউলিপের নামে হস্তান্তরিত হয়। তবে ফ্ল্যাটটি কেনা হয়নি বা এর জন্য কোনো মর্টগেজ নেওয়া হয়নি, যা হস্তান্তরের বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
ব্রিটিশ সরকারের প্রতিক্রিয়া
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা টিউলিপের ফ্ল্যাট ব্যবহার প্রসঙ্গে স্টারমারের কাছে প্রশ্ন করেন। তিনি জানান, টিউলিপ সঠিকভাবে স্বতন্ত্র উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করেছেন এবং তার প্রতি আস্থা রয়েছে।
পদত্যাগের দাবি
ব্রিটেনের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির (টরি) এমপিরা দাবি করেছেন, টিউলিপ যদি এসব অভিযোগের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হন, তবে তার মন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাতিজি। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ এবং টিউলিপসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করা হয়েছে।
টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এবং তার রাজনৈতিক প্রভাব আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। এই বিতর্ক তার মন্ত্রিত্বের ভবিষ্যৎ এবং ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করতে পারে।