জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র–জনতার ওপর হামলা, গুলিবর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলাগুলোয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গণহারে জামিন পাচ্ছেন—এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটি। এসব জামিনের পেছনে দায়ী হিসেবে হাইকোর্টের ২৮ জন বিচারপতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত কোর কমিটির বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, শিল্প উপদেষ্টা ও সেনা কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে মতামত দেন। সঠিক সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করতে আইন মন্ত্রণালয় ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বৈঠকে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার পর যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপসহ নাশকতার ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলে বিবেচনা করে কমিটি। তাদের মতে, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও পুলিশের দুর্বলতায় অনেক আসামি জামিন পেয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করা হয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বৈঠকে জানান, হাইকোর্টের ২৮ বিচারপতি আওয়ামী লীগ–ঘনিষ্ঠ হওয়ায় দলটির কর্মীরা বেশি সংখ্যায় জামিন পাচ্ছেন। এতে নাশকতার ঝুঁকি বাড়ছে বলে মত দেন তিনি। শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে যাতে কেউ সহিংসতা ঘটাতে না পারে—সে বিষয়ে সবার সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের নেতারাও রয়েছেন এ তালিকায়। একই সময়ে ৩৫ হাজারের বেশি ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। কর্মকর্তারা মনে করেন, বয়স, অসুস্থতা, পুলিশের দুর্বল প্রতিবেদন ও দলের পদ না থাকার কারণেই জামিন সহজ হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, অনেকেই জামিনের পর পুনরায় নাশকতায় জড়িয়ে পড়ছে।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে বড় ধরনের কোনো আতঙ্ক নেই। কয়েকটি ছোট ঘটনা ঘটছে, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।” তিনি আরও জানান, কয়েক জায়গায় হাতবোমা বিস্ফোরণ হলেও অভিযুক্তরা ধরা পড়ছে।
যানবাহনে অগ্নিসংযোগ বা ককটেল নিক্ষেপকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ‘গুলির নির্দেশ’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি আত্মরক্ষার অধিকার। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীও বলেন, আত্মরক্ষার অধিকার সব দেশে স্বীকৃত।
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় কার্যকর করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, “তার প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় চিঠি দেওয়া হয়েছে, দরকার হলে আবারও দেওয়া হবে।”
সিএনআই/২৫