১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার
১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইএমএফের আপত্তি: বাজারভিত্তিক নয় ডলার দর নির্ধারণ

শেয়ার করুন

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথাকথিত ‘বাজারভিত্তিক’ ডলার দর নির্ধারণ পদ্ধতি নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে রেফারেন্স রেট ব্যবহার করছে, তা পুরোপুরি বাজারভিত্তিক নয়। প্রকৃত অর্থে বাজারভিত্তিক দর নিশ্চিত করতে হলে বিনিময় হার সম্পূর্ণভাবে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।

রোববার (২ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে টানা তৃতীয় দিনের মতো বৈঠকে বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানায় আইএমএফ প্রতিনিধি দল। দলের নেতৃত্বে ছিলেন ক্রিস পাপাজর্জিও, আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো ইকোনমিকস বিভাগের প্রধান। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. হাবিবুর রহমান, জাকির হোসেন চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, গভর্নর জানান, ডলারের দর এখন রেফারেন্স রেটের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে আইএমএফের দাবি—রেফারেন্স রেট কখনো পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হতে পারে না; বরং ক্রেতা-বিক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী দর নির্ধারণের স্বাধীনতা থাকতে হবে।

আইএমএফ দুর্বল ব্যাংকগুলোকে জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এমন ‘আনসিকিউরড’ ঋণ দেওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, যা বন্ধ করা উচিত। বর্তমানে এসব ব্যাংক প্রতিশ্রুতিপত্রের (ডিমান্ড প্রমিসরি নোট) মাধ্যমে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা ধার নিয়েছে, যা ফেরত দেওয়া অনিশ্চিত।

এছাড়া পতিত সরকারের সময় গোপন রাখা বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করায় আইএমএফ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে রিজার্ভ থেকে রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠন এবং বিভিন্ন পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সংস্থাটি।

বৈঠকে আইএমএফ জানায়, ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তির শর্ত অনুযায়ী সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। বর্তমানে খেলাপির পরিমাণ প্রায় ৬ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

আইএমএফ প্রতিনিধি দল মূল্যস্ফীতি হ্রাসে সন্তোষ প্রকাশ করলেও বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদি স্থবিরতা রোধে পদক্ষেপ জানতে চেয়েছে। তারা মুদ্রানীতি, ব্যাংক একীভূতকরণ, তারল্য সংকট এবং ব্যাংকগুলোর পুনর্মূলধন কার্যক্রম সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য নিয়েছে।

২০২৩ সালে বাংলাদেশ আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে, যা পরবর্তীতে বাড়িয়ে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার করা হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ পাঁচ কিস্তিতে মোট ৩৬৪ কোটি ডলারের মতো অর্থ পেয়েছে। ষষ্ঠ কিস্তি ছাড়ের নির্ধারিত সময় ডিসেম্বর হলেও, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় তা পিছিয়ে ২০২৬ সালের মার্চ বা এপ্রিলে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী জানান, “আইএমএফের পঞ্চম রিভিউ মিশন নিয়মিত সফরে এসেছে। তারা ঋণচুক্তির শর্ত পূরণের অগ্রগতি যাচাই করছে—বিশেষত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সুদের হার, তারল্য সহায়তা, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা ও খেলাপি ঋণ কমানোর পদক্ষেপ নিয়ে।”

সিএনআই/২৫

শেয়ার করুন