
ইয়াছিন আরাফাত (জেলা প্রতিনিধি) : নোয়াখালী সোনাইমুড়িতে রেলওয়ে স্টেশন জামে মসজিদের সম্পত্তি অবৈধ দখল ও ভূয়া দলিল বাতিলের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও মুসুল্লিরা।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে মসজিদের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও মুসুল্লিরা জানান সোনাইমুড়ি পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড ২৮৭ নং সাবেক নাওতলা মৌজা, বর্তমান ২৮৮নং মৌজার সাবেক দাগ ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ হাল দাগ ১০০৯, ১০১০ দাগে সাড়ে ৬১ শতাংশ জায়গা যাহা নোটারি পাবলিক বাংলাদেশ কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন করা হয়। মসজিদের সাফ কবলা সম্পত্তি ২৮৮ নং নাওতলা মৌজার ৩৭’ ৩৮ ‘৩৯’৪০ বর্তমান দাগ ১০০৯, ১০১০ চার দাগে সম্পত্তি ৩০ শতাংশ।
১৯৫৬ সালে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন চাটখিল কামালপুর নিবাসী তৎকালীন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ এবং আলেমেদ্বীন মরহুম মাওলানা মোখলেসুর রহমান। তিনি চাটখিল থেকে নৌকা যুগে ট্রেনে ঢাকায় যাওয়ার জন্য সোনাইমুড়িতে রেলওয়ে স্টেশন আসতেন। তখন সোনাইমুড়ী স্টেশনে যাত্রা বিরতিকালে তিনি একটি মসজিদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে পরবর্তীতে তিনি মতোয়াল্লি হয়ে তাহার মা মাহমুদা খাতুন এর নামে ৪ দাগে সোনাইমুড়ি ও আলোকপাড়া নিবাসী হিন্দু ব্যক্তিদের কাছে একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য উক্ত সম্পত্তিগুলো দানের অনুরোধ করলে ধর্মপ্রাণ হিন্দু ব্যক্তিগণ মসজিদের জন্য নামমাত্র মূল্যে উক্ত সম্পত্তিগুলো মাওলানা মোখলেসুর রহমানের কাছ বিক্রি করেন। তৎপরবর্তীতে মাওলানা মোখলেসুর রহমান উক্ত সম্পত্তির উপরে স্থানীয় লোকজনের দান অনুদান ও সহযোগিতায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। তৎকালে ঢাকায় আসা যাওয়ার পথে মসজিদে তার ইমামতিতে মুসল্লিগণ নামাজ আদায় করতেন। তৎকালীন সময় মাহফিল করে স্থানীয় ধর্মপান মানুষ থেকে টাকা উত্তোলন করে ৪০ শতাংশ সম্পত্তির উপরে একটি পুকুর খনন করেন তিনি। বিগত প্রায় ৫০ বছর যাবৎ হাজার হাজার মানুষ পুকুরটিতে অজু ও গোসল করে আসছেন।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় কালক্রমে মসজিদের সম্পত্তির উপর কিছু দুষ্টচক্র ও লোভীদের কু-দৃষ্টি পড়ে। মাওলানা মোখলেসুর রহমানের মৃত্যুর পরে তার একমাত্র ছেলে শেখ জাকারিয়া মসজিদের দেখাশুনা করতেন এবং একটি পরিচালনা কমিটি করে দেন যেটি বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীগণ আজও পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। মসজিদটি মসজিদুল আনোয়ার নামকরণ করেন প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মোখলেসুর রহমান, মসজিদের উক্ত গেটের অংশবিশেষ আজও কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
মাওলানা মোখলেছুর রহমানের মৃত্যুর পর তার ছেলে শেখ জাকারিয়ার কাছে মসজিদ কমিটির তৎকালীন সেক্রেটারি সহ কয়েকজন দেখা করে বললেন আপনার বাবা মসজিদ নির্মাণ করেছেন কিন্তু তিনি রেজিস্ট্রি করে দেননি আপনি তাহার একমাত্র ছেলে হিসেবে সম্পত্তিগুলো মসজিদের নামে রেজিস্ট্রি করে দিন। তিনি কালক্ষেপ করেন এবং কমিটিকে বললেন মসজিদ ফান্ডের টাকা খরচ করার দরকার নাই একটা নোটারি পাবলিক করলেই চলবে আমাদের ওয়ারিশরা কেউ এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না কমিটি মানতে না চাইলে তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন আমার বাবার সম্পত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত চাটখিল কামালপুরে এবং ঢাকার তেজগাঁওয়ে ইসলামিক মিশনের অনেক সম্পত্তি রযেছে ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যবহার হচ্ছে আমাদের কোন ওয়ারিশ এগুলো নিয়ে কোনদিন দাবি নিয়ে দাঁড়াবেনা অতএব সোনাইমুড়ি ষ্টেশন জামে মসজিদের সম্পত্তিতেও ওয়ারিশরা দাবী করবেনা তার এ কথায় বিশ্বাস রেখে মসজিদ কমিটি একটি নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে সাড়ে ৬১ শতক সম্পত্তি মসজিদের নামে ওয়াকফ্ করে দেন তিনি। শেখ জাকারিয়ার মৃত্যুর পর তার ছেলে শেখ রেদওয়ান এবং মাওঃ মোখলেছুর রহমানের ওয়ারিশ ও নাতিগণের কাছে এখানকার কিছু কুচক্রি ও ভুমি খেকো তাদেরকে ফুসলিয়ে নামমাত্র মূল্য দিয়ে কিছু দলিল সৃজন করে দিলে বিগত ফ্যাসিষ্ট আমলে ১৭ বছরে তারা মসজিদের পুকুরসহ জায়গা গুলো দখল করে মুসল্লিদের ওযু ও গোসল বন্ধ করে দিয়ে মসজিদের পুকুরের ৭০ হাজার টাকার মাছ লুট করে নেয় এবং পুকুরটি মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলে আমরা বাধা দিতে গেলে কমিটির সদস্যদের মারধর ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হুমকি প্রদান করায় বিগত দিনে মসজিদের কমিটি বা মুসল্লিগণ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
মসজিদের সাড়ে ৬১ শতাংশ জায়গা যাহা নোটারি পাবলিক বাংলাদেশ কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন করা হয়। এ ছাড়াও ধন্যপুর নিবাসী বড় মিয়া প্রকাশ সিরাজুল ইসলাম এই মসজিদের জন্য ৩০ শতাংশ সম্পত্তি ওয়াকফ করেন। বর্তমানে দখলবাজরা মসজিদের সেই ৩০ শতাংশ জায়গাও দখল করে রেখেছে।
জায়গাগুলো দখলমুক্ত না হওয়ায় জরাজীর্ণ মসজিদটি সংস্কার করা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় সৃজনকৃত ভুয়া দলিল সমূহ বাতিল পূর্বক মসজিদের উক্ত সম্পদগুলো দখল মুক্ত করতে সরকারের কাছে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সোনাইমুড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোতাহের হোসেন মানিক, উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ সাহাব উদ্দিন, মসজিদ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামছুল আরেফিন জাফর, সাধারণ সম্পাদক সফিকুর রহমান, সহ সভাপতি লাতু ভূঁইয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সদস্য ইমাম হোসেনসহ বাজারের ব্যাবসায়ী ও মসজিদের মুসুল্লিরা।