১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার
১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিআরবির শিরীষতলায় অনুষ্ঠান ভাড়ায় ক্ষোভ চরমে

শেয়ার করুন

চট্টগ্রাম নগরের সবুজ-ছায়াঘেরা সিআরবির (সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং) শিরীষতলায় এখন থেকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা ব্যক্তিগত কোনো অনুষ্ঠান করতে হলে দিতে হবে ভাড়া। ঘণ্টাপ্রতি ১,৭৫০ টাকা, দৈনিক ৪২ হাজার, মাসিক ১২ লাখ ৫২ হাজার ৩৪০ টাকা এবং বাৎসরিক ১ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি ভাড়া নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সিআরবির প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা, শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং রেলওয়ের আয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। তবে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বলছে, এই সিদ্ধান্ত গণবিরোধী এবং সংস্কৃতি চর্চায় বড় বাধা তৈরি করবে।

 সামাজিক সংগঠনগুলোর ক্ষোভ

চট্টগ্রামের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ইতোমধ্যে সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছে। সোশ্যাল অর্গানাইজেশন ফোরাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন করেছে।
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক বায়েজিদ সুমন বলেন, “আমরা দাতব্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করি, ব্যবসা নয়। ঘণ্টায় ১,৭৫০ টাকার ভাড়া হলে মানুষের জন্য কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।”

 রেলওয়ের অবস্থান

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিআরবির শিরীষতলা মাঠের আয়তন ৬২ হাজার ৬১৭ বর্গফুট। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এখানে অনুষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শব্দদূষণ ও জনসমাগমে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।
রেলভূমি বরাদ্দ কমিটির এক সদস্য বলেন, “অতিরিক্ত অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা ফেরাতেই এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে পরিবেশও রক্ষা পাবে এবং রেলওয়ের আয় বাড়বে।”

 আবেদন ও অনুমতির নিয়ম

এখন থেকে সিআরবিতে অনুষ্ঠান করতে হলে প্রথমে ৫০০ টাকা ফি জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে সোনালী ব্যাংকের নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে। পরে নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করে রসিদ জমা দিতে হবে রেলওয়ের দপ্তরে। সব যাচাই শেষে অনুমতি দেবে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক কার্যালয়।

 বিশেষজ্ঞদের মতামত

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, “সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের জন্য সিআরবির ভাড়া এত বেশি হওয়া অযৌক্তিক। দৈনিক ১ হাজার টাকার বেশি ভাড়া হওয়া উচিত নয়।”

 ক্যাব ও নাগরিক কমিটির উদ্বেগ

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ জানিয়েছে, শহরের কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানের ভাড়া এখন লাখ টাকার উপরে। শিরীষতলায় একই রকম ভাড়া নির্ধারণ করলে দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
একইভাবে নাগরিক অধিকার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক লায়ন এম এ হোসেন বাদল বলেছেন, “এ সিদ্ধান্ত চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও সত্তার ওপর আঘাত। রেলওয়ের এই নৈরাজ্য অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।”

 প্রকৃতি রক্ষা নাকি সংস্কৃতির বাধা?

রেলওয়ে বলছে, শিরীষতলার প্রকৃতি ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যই নতুন নিয়ম। কিন্তু সামাজিক সংগঠনগুলোর আশঙ্কা—এই সিদ্ধান্তে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চার পরিসর সংকুচিত হবে এবং সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে সিআরবির সবুজ প্রান্তর।একপক্ষের যুক্তি—সংরক্ষণ দরকার। অন্যপক্ষের দাবি—সংস্কৃতি বাঁচাতে দরকার উন্মুক্ততা। এখন চট্টগ্রামের মানুষ অপেক্ষায়—রেলওয়ে কি শিরীষতলার ভাড়ার নীতি পুনর্বিবেচনা করবে?

সিএনআই/২৫

শেয়ার করুন