
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এক হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার ১৩টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১,৮৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ৫৩ কোটি ২ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৫০ কোটি টাকা।
এর মধ্যে নতুন প্রকল্প তিনটি, সংশোধিত প্রকল্প সাতটি এবং ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ বৃদ্ধির প্রকল্প তিনটি। তবে হাওর ও বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রস্তাবিত ‘জলবায়ু সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প’ (সিআরএলইপি) অনুমোদন পায়নি এবং পুনর্গঠনের জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, প্রকল্পে মূল গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ইট-পাথর ও অবকাঠামো নির্মাণে। কিন্তু টেকসই জীবিকা উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসের বিষয়টি প্রায় উপেক্ষিত। তার আপত্তির পর একনেক সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, হাওর অঞ্চলের প্রকৃত চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণের অংশ কমিয়ে প্রকল্পটি পুনর্গঠন করে পুনরায় উপস্থাপন করতে হবে।
সিআরএলইপি প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, হাওর এলাকায় অতিরিক্ত রাস্তা বা ভবন নির্মাণ বন্যার পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যা কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং মাছের প্রজনন ব্যাহত করে।
পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়নে দেখা গেছে, প্রকল্পের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অর্থ খরচ হবে সড়ক, ঘাট, বাজার ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে। কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের পরামর্শে জীবিকা ও প্রশিক্ষণ উপাদান বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হলেও তা চূড়ান্ত প্রস্তাবে প্রতিফলিত হয়নি।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১,২৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার ৩০৫ কোটি টাকা, আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) ঋণ হিসেবে ৮৫৪ কোটি টাকা এবং ডেনমার্কের উন্নয়ন সংস্থা ডানিডা ১০৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
পাঁচ বছর মেয়াদে প্রকল্পের আওতায় ৩৩৪ কিলোমিটার সড়ক, ৫৮টি বাজার পুনর্বাসন, ৩৪টি ঘাট, ৭২টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৪৮০টি শৌচাগার ও ৭২০টি নলকূপ নির্মাণ এবং ৪০ হাজার যুবককে প্রশিক্ষণ ও ২০ হাজারকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- কক্সবাজারে কৃষি খাদ্য ব্যবস্থা রূপান্তরের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি, গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা টেকসইকরণ, খুলনা বিভাগের পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরীণ সড়ক ও ফুটপাত উন্নয়ন, উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্প, ক্যানবেরায় বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন নির্মাণ, কিশোরগঞ্জ থেকে পাকুন্দিয়া-মির্জাপুর টোক সড়ক উন্নয়ন, বিএসটিআই’র পরীক্ষাগার সম্প্রসারণ, ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট পুনঃশক্তিকরণ, পাবনার মানসিক হাসপাতাল আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ইনস্টিটিউটে রূপান্তর এবং রেলওয়ের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেট পুনর্বাসন।
একনেক সূত্র জানিয়েছে, সিআরএলইপি প্রকল্প বাতিল হয়নি। অবকাঠামো নির্ভর কাঠামো পরিবর্তন করে স্থানীয় মানুষের জীবিকা ও প্রশিক্ষণ অংশ জোরদার করার পর পুনরায় একনেকে উপস্থাপন করা যাবে।
পরিবেশ উপদেষ্টার মতে, টেকসই উন্নয়নের পথে যেতে হলে প্রকৃতি ধ্বংস নয়, প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবিকা গড়ে তুলতে হবে।