১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার
৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বর্ণিল আয়োজনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

শেয়ার করুন

বর্ণাঢ্য আয়োজনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর (বেরোবি)-এর ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। শনিবার (১২ অক্টোবর) দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মুখরিত হয়ে ওঠে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অতিথিদের পদচারণায়। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল “শিক্ষা, গবেষণা ও বিপ্লবের চেতনায় দীপ্ত হোক বেরোবির আগামী।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ১৫ বছর বিশ্ববিদ্যালয়টি কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। তবে বর্তমানে এটি নতুন করে পুনর্জাগরণের পথে রয়েছে। এখনই সময় বেরোবিকে একটি মানসম্মত ও জ্ঞাননির্ভর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার।”

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নত মানের জ্ঞানের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশাসন, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এবং সামাজিক সহায়তার প্ল্যাটফর্মগুলোর যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। পাশাপাশি অবকাঠামোগত ঘাটতি পূরণের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

প্রতিষ্ঠাকালীন “রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ” এর আহবায়ক শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. রেজাউল হক উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, “বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরবঙ্গের উচ্চশিক্ষা আন্দোলনের প্রতীক। এটি প্রতিষ্ঠার পেছনে ছিল দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের ইতিহাস, যা আজ উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার দুয়ার উন্মোচন করেছে।”

প্রধান আলোচক হিসেবে প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. লুৎফর রহমান বলেন, “একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তি তার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষণার মানে নিহিত। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গবেষণাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, ভবন নির্মাণ নয় বরং মুক্ত চিন্তা, মানবিক মূল্যবোধ ও সৃজনশীলতার বিকাশই বিশ্ববিদ্যালয়কে সত্যিকার অর্থে জ্ঞান-আলোকের কেন্দ্র করে তুলতে পারে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ রাশেদুল ইসলাম বলেন, “বর্তমান প্রশাসনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বেরোবি ইতোমধ্যে একটি স্বনামধন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়টি দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করেছে, যা দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।”

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শওকাত আলী বলেন, “বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে বেরোবি এখন এক নবজাগরণের পর্যায়ে রয়েছে। আমরা গবেষণার সুযোগ সম্প্রসারণ, নতুন ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন এবং শিল্প-একাডেমিক সংযোগ জোরদারে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য বেরোবিকে আন্তর্জাতিক মানের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রে রূপান্তর করা।”

তিনি আরও বলেন, সততা, মেধা ও নিষ্ঠা নিয়ে সবাই যদি নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন, তবে অচিরেই বেরোবি দেশের শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাতারে পৌঁছাবে।

ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ ইলিয়াছ প্রামানিকের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন মোঃ ফেরদৌস রহমান, ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ড. মোঃ তাজুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার ড. মোঃ হারুন-অর রশিদ, সুজন রংপুর মহানগরের সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু, এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি শামসুর রহমান সুমন ও আহমাদুল হক আলভী প্রমুখ। এ সময় সম্মানিত অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে “KiK Make the Difference Scholarship 2025”-এর আওতায় পাঁচ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। জার্মান উন্নয়ন সংস্থা GIZ International Services-এর সহায়তায় ও KiK Retailer Brand-এর অর্থায়নে এই বৃত্তি প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আনন্দ শোভাযাত্রা, কেক কাটা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, দোয়া-মিলাদ মাহফিল ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। প্রধান অতিথি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান জাতীয় পতাকা এবং উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শওকাত আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন। পরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।

বাদ্যের তালে তালে আনন্দ শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে শহীদ আবু সাঈদ চত্বর ও ক্যাডেট কলেজ মোড় প্রদক্ষিণ করে পুনরায় ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়। দিনব্যাপী আয়োজনে আলোকসজ্জায় ঝলমলে হয়ে ওঠে বেরোবি ক্যাম্পাস, যা পরিণত হয় উৎসবমুখর এক মিলনমেলায়।

শেয়ার করুন