১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারত সফরে যাচ্ছেন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী

শেয়ার করুন

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারত সফরে যাচ্ছেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি) এই তালেবান নেতার ওপর আরোপিত ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরপরই ঐতিহাসিক সফরে ভারতে যাচ্ছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট ও এনডিটিভি।

এর আগে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কারণে মুত্তাকির ভারত সফর বাতিল হয়ে গিয়েছিল। গত মাসেও ইউএনএসসির ১৯৮৮ নিষেধাজ্ঞা কমিটির কাছে মুত্তাকির ভারত সফরের জন্য একটি ছাড় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব, বিশেষ করে পাকিস্তানের আপত্তির কারণে তা মঞ্জুর হয়নি।

তবে সাম্প্রতিকএক বিবৃতিতে ইউএনএসসি জানিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা পরিষদ রেজল্যুশন ১৯৯৮ (২০১১) অনুযায়ী ৯ থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত আমির খান মুত্তাকির নয়াদিল্লি সফরের জন্য ভ্রমণনিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের আগস্টে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আশরাফ গনি সরকারের পতনের পর এটিই হবে কোনো তালেবান কর্মকর্তার প্রথম ভারত সফর।

এনডিটিভি বলছে, ভারতীয় কূটনৈতিক মহল কয়েক মাস ধরে এ সফরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। জানুয়ারি থেকে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ও সিনিয়র আইএফএস কর্মকর্তা জে.পি. সিং দুবাইসহ নিরপেক্ষ স্থানে একাধিক দফায় মুত্তাকী ও অন্যান্য তালেবান নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব আলোচনায় মূলত ভারতের দেওয়া মানবিক সহায়তা, বিশেষত স্বাস্থ্য খাত শক্তিশালী করা ও শরণার্থীদের পুনর্বাসন নিয়ে কথা হয়।

এদিকে ভারত সরকার ও তালেবানের সম্পর্ক গত কয়েক মাসে আরও জোরদার হয়েছে। চলতি বছরের ১৫ মে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের পর ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর মুত্তাকীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ২০২১ সালের পর এটিই ছিল প্রথম মন্ত্রীপর্যায়ের যোগাযোগ। ওই সময় জয়শঙ্কর আফগান জনগণের সঙ্গে ভারতের ‘ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বের’ কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

এছাড়াও ভারত ইতোমধ্যে আফগানিস্তানে খাদ্যশস্য, ওষুধ ও উন্নয়ন সহায়তা বাড়িয়েছে। তালেবান সরকার ভারতকে জ্বালানি, অবকাঠামোসহ নানা খাতে সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরের বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর ভারত ১ হাজার তাঁবু ও ১৫ টন খাদ্য পাঠিয়েছিল। পরবর্তীতে আরও ২১ টন ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়।

এনডিটিভি বলছে, ভারতের জন্য আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফর ঝুঁকিপূর্ণ হলেও কৌশলগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। মূলত সরাসরি তালেবান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আফগানিস্তানে দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ রক্ষা, সন্ত্রাসী হুমকি প্রতিরোধ এবং পাকিস্তান-চীনের প্রভাব মোকাবিলা করতে চাইছে ভারত।

যদিও ভারত কাবুলে ক্ষমতায় থাকা তালেবান সরকারকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি, তবে তারা আফগান রাজধানীতে একটি কারিগরি মিশন চালু রেখেছে এবং গত এক বছরে এই সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ করে আসছে। তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে আফগানিস্তানে ৫০০টিরও বেশি প্রকল্পে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছিল ভারত।

এদিকে, বৈশ্বিকভাবে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকির পরিচিতি বেড়েছে। চলতি বছরের মে মাসে তিনি চীন সফর করেন। এ ছাড়া তিনি ৬ অক্টোবর মস্কো সফরে যাচ্ছেন এবং ৭ অক্টোবর আফগানিস্তান নিয়ে মস্কো ফরম্যাট কনসালটেশনের সপ্তম রাউন্ডে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে দেখা করবেন। মস্কো সফরের পরই মুত্তাকির নয়াদিল্লি যাওয়ার কথা।

শেয়ার করুন