১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার
১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে টমেটো, বিপাকে কৃষক

শেয়ার করুন

নড়াইলে টমেটোর ভালো ফলন, তবু বিপাকে কৃষক

নড়াইলে এবার টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে, তবে বাজারে চাহিদা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। মাঠজুড়ে পাকা টমেটো ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে। ক্রেতার অভাবে বিক্রি করা তো দূরের কথা, বিনামূল্যেও নিতে চাইছে না কেউ। ফলে টনকে টন টমেটো ফেলে দেওয়া হচ্ছে ভাগাড়ে। উৎপাদন খরচও তুলতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলার চাষিরা।

বাম্পার ফলন, কিন্তু বাজার নেই

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে নড়াইলে ১৮৫ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে, যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫,১০০ টন। সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের রুখালী মাঠের বিস্তীর্ণ জমিতে পাকা টমেটো পড়ে নষ্ট হচ্ছে। কৃষকেরা আড়তে নিয়ে বিক্রি করতে না পেরে সেগুলো ভাগাড়ে ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

কৃষকদের দুর্দশা

রুখালী গ্রামের টমেটোচাষি মনির শেখ বলেন, “আমি ঘেরের পাড়ে ৫ বিঘা জমিতে টমেটো লাগিয়েছিলাম। একেকটি চারার পেছনে ২০-২৫ টাকা খরচ হয়েছে। প্রথম দিকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিলাম, কিন্তু এখন কেউ কিনতেই চায় না। আড়ৎদাররা পর্যন্ত ফিরিয়ে দিচ্ছে। সব পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কাক আর পাখির খাদ্য হয়ে গেছে টমেটো।”

একই গ্রামের মাহাবুব হোসেন বলেন, “আমার জমিতে ৫-৬ টন টমেটো আছে, কিন্তু বাজারে নেওয়ার উপায় নেই। গত বছর জুস কোম্পানিরা এসে ৫ টাকা কেজি দরে কিনেছিল, এবার তারা আসেইনি। বাজারে নিলে আবার পরিষ্কার করেও আসতে হচ্ছে। এভাবে চললে ভবিষ্যতে টমেটো চাষ করাই অসম্ভব হয়ে যাবে।”

টমেটোচাষি খায়রুল বলেন, “এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকাও তুলতে পারিনি। এক টাকা কেজি দরে দিলেও কেউ নিতে চায় না। যদি ৮ টাকা কেজিতেও বিক্রি করতে পারতাম, তাহলে অন্তত খরচ উঠে যেত। পুরো বিলজুড়ে ৫০ বিঘা জমির টমেটো একই অবস্থা।”

চন্দন বিশ্বাস বলেন, “টমেটোর দাম এতটাই কম যে, ভ্যান ভাড়াও উঠে না। তাই বাধ্য হয়ে পাশের খালে ফেলে দিচ্ছি। জমি পরিষ্কার করতেও শ্রমিক লাগবে, কিন্তু সেই খরচও তোলা সম্ভব হচ্ছে না।”

কৃষি কর্মকর্তার মন্তব্য

নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, “এ বছর টমেটোর উৎপাদন ভালো হয়েছে, কিন্তু অতিরিক্ত ফলনের কারণে বাজারে চাহিদা কমে গেছে, ফলে দাম কমে গেছে। আমরা কৃষকদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।”

সমাধান কী?

বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষকদের এই লোকসান ঠেকাতে সরকারি সহায়তা, রপ্তানির উদ্যোগ, প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলা এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি। কৃষকরা যদি ন্যায্যমূল্য না পান, তাহলে ভবিষ্যতে টমেটো চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন, যা কৃষি উৎপাদনের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে।

 

শেয়ার করুন