
রমজানের প্রস্তুতিতে শাবান মাসে রাসূল (সা.)-এর আমল
পবিত্র রমজানের প্রস্তুতি শুরু হতো রজব মাস থেকেই। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রজব মাস আসলেই রমজানের বরকত লাভের জন্য দোয়া করতেন এবং শাবান মাসেও তা অব্যাহত রাখতেন। শাবান মাসে তিনি রমজানের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতি নিতেন, যা আমাদের জন্য অনুসরণীয়।
১. শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা
হাদিস থেকে জানা যায়, রাসূল (সা.) শাবান মাসে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি নফল রোজা রাখতেন। এটি ছিল রমজানের দীর্ঘ এক মাস রোজার জন্য তার মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতির একটি অংশ।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন,
“আমি কখনো রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে শাবান মাসের চেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতে দেখিনি।” (বুখারি, হাদিস: ১৯৬৯; মুসলিম, হাদিস: ১১৫৬)
তবে যারা শাবান মাসের শুরু থেকে নফল রোজা রাখেননি, তাদের জন্য মাসের শেষ দিকে রোজা রাখা নিরুৎসাহিত করেছেন রাসূল (সা.)।
২. শাবানের শেষে রমজানের চাঁদ দেখা
রমজানসহ যেকোনো আরবি মাস শুরুর আগে রাসূল (সা.) চাঁদ দেখতেন এবং সাহাবাদেরও চাঁদ দেখার ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন।
নতুন চাঁদ দেখলে তিনি একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন—
দোয়া:
اَللّهُّمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلاَمَةِ وَالْإِسْلاَمِ رَبِّيْ وِرَبُّكَ الله
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম; রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।
অর্থ:
“হে আল্লাহ! এ চাঁদকে ঈমান, নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ।” (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫২৬)
৩. রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা
রাসূল (সা.) শাবান মাসে রমজানের ফজিলত সম্পর্কে সাহাবাদের সচেতন করতেন। তিনি বলতেন, এ মাস অত্যন্ত বরকতময় এবং আল্লাহ তায়ালা রোজার মাধ্যমে বান্দাদের জন্য অফুরন্ত রহমত ও মাগফিরাতের ব্যবস্থা রেখেছেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“তোমাদের নিকট বরকতময় রমজান আগমন করেছে। আল্লাহতায়ালা তার রোজাকে তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে আবদ্ধ করা হয় এবং তাতে রয়েছে আল্লাহর জন্য এমন এক রাত যা হাজার রাতের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ মাসের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে প্রকৃতার্থেই বঞ্চিত হলো।” (সুনানে নাসায়ি)
রাসূল (সা.)-এর শাবান মাসের এই আমলগুলো আমাদের জন্য শিক্ষা। আমরা যদি শাবান মাস থেকেই নফল রোজা, চাঁদ দেখা, দোয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি নিই, তাহলে এই মাসের পূর্ণ ফজিলত অর্জন করা সহজ হবে।