
সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ইজারা বাবদ বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৮২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে চিঠি চালাচালি চললেও বেবিচক এই পাওনা আদায় করতে পারছে না।
গত ১০-১৫ বছর ধরে বকেয়া আদায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বেবিচক। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বকেয়া টাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ৭২৩ কোটি টাকা, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে। এরপর রয়েছে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামের কাস্টমস হাউজ, যাদের কাছে ৪৩ কোটি ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বকেয়ার পরিমাণ:
বেবিচকের হিসাব অনুযায়ী, অন্যান্য সরকারি সংস্থার কাছে বকেয়ার পরিমাণ নিম্নরূপ:
পদ্মা অয়েল: ১৮ কোটি ৪৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন: ৩ কোটি ৯৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা
কাস্টমস হাউজ (ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম): ৪৩ কোটি ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর: ১ কোটি ২৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা
কর কমিশন (কর অঞ্চল-১১): ৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা): ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা
বিটিসিএল: ৮ লাখ ৭২ হাজার টাকা
ডাক বিভাগ: ২০ লাখ ২৩ হাজার টাকা
পুলিশের সিটি এসবি বিভাগ: ১ কোটি ২১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা
র্যাব ফোর্সেস: ৫ কোটি ৮৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা
সেনাবাহিনী: ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা
চট্টগ্রাম আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ: ৩ কোটি টাকা
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর: ৯৬ হাজার টাকা
মৎস্য অধিদপ্তর: ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর: ৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর: ৮৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা
ডেসকো: ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৯ হাজার টাকা
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন: ১ কোটি ৫৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড: ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা
সোনালী ব্যাংক: ৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা
জনতা ব্যাংক: ১৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক: ৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সর্বোচ্চ বকেয়া
সবচেয়ে বেশি বকেয়া রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে, যা ৭২৮ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এ বিষয়ে পৃথক সভার আয়োজন করে দ্রুত আদায়ের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বকেয়া আদায়ে উদ্যোগ ও প্রতিক্রিয়া
জানুয়ারির সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মিত ইজারার অর্থ পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে বেবিচকের জনসংযোগ কর্মকর্তা কাওসার মাহমুদ বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান এবং অর্থ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ করেন।
অন্যদিকে, বেবিচকের সদস্য (অর্থ) এস এম লাবলুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইজারা কী?
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৭ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে ভবন, স্থাপনা, কক্ষ, ফ্লোর স্পেস, বিজ্ঞাপন প্রদর্শন, হ্যাংগার, কৃষি জমি, নার্সারি, জলাশয়, কার পার্ক, কনকোর্স হল, দর্শক গ্যালারি, পাবলিক টয়লেট ইত্যাদি নির্দিষ্ট মেয়াদে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে এতে সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তরিত হয় না, শুধু ব্যবহারের অধিকার সাময়িকভাবে দেওয়া হয়।
বেবিচকের বিপুল পরিমাণ বকেয়া আদায়ে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। বিশেষ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাওনা আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।