১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার
১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণার সিদ্ধান্ত

শেয়ার করুন

 

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন। এই শোকাবহ দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বছর থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে পালিত হবে, তবে এ দিনে সরকারি ছুটি থাকবে না। সেনাসদস্যদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দিতে সরকার এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে, ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে পালনের অনুমোদন দিয়েছেন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এখন শুধু প্রজ্ঞাপন জারি করা বাকি।

শহীদ পরিবারের প্রতিক্রিয়া

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা।

কর্নেল কুদরত ইলাহীর সন্তান অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান বলেন, “২০১৩ সাল থেকে আমরা শহীদ পরিবাররা দুটি দাবি জানিয়ে আসছি—প্রথমত, স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত ও বিচারের আওতায় আনা এবং দ্বিতীয়ত, ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা করা। সরকার যদি এই দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়, তবে আমাদের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের একটি বড় অর্জন হবে।”

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অন্ধকার ও কলঙ্কময় দিন। পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)-এর কিছু বিপথগামী সদস্যের নির্মম হত্যাযজ্ঞে ৫৭ জন বীর সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন শাহাদাতবরণ করেন। এটি ছিল এক কাপুরুষোচিত ষড়যন্ত্র, যেখানে নিরস্ত্র সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধেও বাংলাদেশ একসঙ্গে এতজন সেনা কর্মকর্তাকে হারায়নি। এই ভয়াবহ ঘটনায় সশস্ত্র বাহিনীর মনোবলে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ দিনটি শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর জন্য নয়, পুরো জাতির জন্যই শোকাবহ ও হৃদয়বিদারক।

‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ পালনের গুরুত্ব

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, ২৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হলে—
শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের আত্মত্যাগকে জাতীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
শহীদ পরিবারগুলোর জন্য এটি সান্ত্বনার প্রতীক হবে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম, দায়িত্ববোধ ও আত্মত্যাগের মানসিকতা গড়ে উঠবে।
সেনাবাহিনীর অবদান সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
সেনাসদস্যদের মধ্যে দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা ও পেশাগত দায়িত্বের প্রতি আরও অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করবে।

সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রস্তাব

সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে তিনটি প্রস্তাব করা হয়েছিল—
প্রতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে পালন করা।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শাহাদাতবরণকারী সেনা সদস্যদের ‘শহীদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা।
নিহত সেনা সদস্যদের নামের পূর্বে ‘শহীদ’ উপাধি অন্তর্ভুক্ত করা।

সরকার ইতোমধ্যে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ পালনের অনুমোদন দিয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারির অপেক্ষা।

 

শেয়ার করুন