১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার
১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কথায়-কথায় আন্দোলন, ঢাকার মানুষের দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই

শেয়ার করুন

সিএনজি চালকরা মিটার পদ্ধতিতে ভাড়া নির্ধারণের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেছেন, ফলে রাজধানী ঢাকায় চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) খিলগাঁও, রামপুরা, মালিবাগ, হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে। গণপরিবহন না থাকায় সাধারণ মানুষকে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।

চালকদের দাবিদাওয়া
আন্দোলনকারীরা দাবি করছেন, মিটারভিত্তিক ভাড়া বৃদ্ধি করতে হবে এবং মিটারে ভাড়া আদায় না করলে যে জরিমানার আইন করা হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এই আইন পরিবর্তন না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন তারা।

সিএনজি চালক বাবু বলেন, “মিটার থাকলে পুলিশ, যাত্রী, মালিক—সবাই আমাদের হয়রানি করে। তাই আমরা চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় গাড়ি চালাতে চাই।”

চালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “মিটারভিত্তিক ভাড়া নিতে বাধ্য করলে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়, যা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে এবং জরিমানা দিতে না পারলে ৬ মাসের জেলও হতে পারে। এই আইন আমরা মানতে পারছি না।”

আরেক চালক নূর আলম বলেন, “গাড়ির গ্যাস, জমা ও রাস্তার খরচ দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। জরিমানা বা মামলার কারণে আমরা বাড়তি চাপের মধ্যে আছি।”

সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ
এদিকে, যানবাহন না থাকায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সাধারণ মানুষকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।

হৃদয় আহমেদ নামে এক যাত্রী বলেন, “ঢাকা এখন আন্দোলনের নগরী। কিছু হলেই রাস্তা বন্ধ। সাধারণ মানুষের কথা কেউ ভাবে না।”

আরেক পথচারী ফয়সাল বলেন, “সকাল ৮টায় বের হয়েছি, এখনো রামপুরায় আটকা আছি। বাধ্য হয়ে হেঁটে অফিসে যাচ্ছি।”

বিআরটিএর নির্দেশনা ও আইন
সম্প্রতি বিআরটিএ এক চিঠিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) অনুরোধ করেছে, যেন মিটারভিত্তিক ভাড়া না নিয়ে বেশি ভাড়া আদায়কারী সিএনজি চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ধারা ৩৫(৩) অনুযায়ী, কোনো চালক রুট পারমিট এলাকার মধ্যে যেকোনো গন্তব্যে যেতে বাধ্য থাকবেন এবং মিটারে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নিতে পারবেন না। আইন অমান্য করলে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

রাজধানীতে সিএনজি সংখ্যা
বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকায় নিবন্ধিত সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংখ্যা ২০,৮৯৪টি। ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অটোরিকশা নিবন্ধন হয়েছে ২০১৯ সালে, মোট ৬,৮৩৯টি। এর আগের বছর, ২০১৮ সালে নিবন্ধন হয়েছিল ৫,৬৩৭টি।

সিএনজি চালকদের দাবি ও সরকারের আইন কার্যকর করার প্রচেষ্টা নিয়ে চলমান এই টানাপোড়েনের ফলে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি, যাতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয় এবং নগরবাসী স্বস্তি ফিরে পায়।

 

শেয়ার করুন