১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলার রায় ছিল অমানবিক ও পক্ষপাতদুষ্ট

শেয়ার করুন

প্রায় তিন দশক আগে পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়কে অমানবিক ও পক্ষপাতদুষ্ট বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বুধবার (৩ জানুয়ারি), বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, বিচারিক আদালতের রায় বিশেষ কোনো মতাদর্শে অনুপ্রাণিত ছিল এবং এতে বিচারকের বিচারিক মননের প্রতিফলন ঘটেনি। বরং, তিনি গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে এ রায় দিয়েছেন। আদালত এ মামলাকে বিদ্বেষপ্রসূত উল্লেখ করে বলেন, এখানে তিলকে তাল করা হয়েছে।

সাক্ষ্যপ্রমাণের অসংগতি:
হাইকোর্ট মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ঘটনাটি ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে ঘটলেও নিরপেক্ষ কোনো প্রত্যক্ষদর্শীকে সাক্ষী করা হয়নি। সাক্ষী হিসেবে নেয়া হয়েছে কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অনুগত ব্যক্তিদের। রাষ্ট্রপক্ষের ৩৭ জন সাক্ষী এবং আসামিপক্ষের ২৫ জন সাক্ষ্য দিলেও, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগুলো পক্ষপাতদুষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

বিচারিক আদালতের রায়ের কঠোর সমালোচনা

হাইকোর্ট বলেন, “সরকারের অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কি বলা যায়, তা বলার ভাষা জানা নেই। আধুনিক রাষ্ট্র কল্যাণের জন্য, না ধ্বংসের জন্য—তা বোধগম্য নয়।” আদালত আরও বলেন, বিচারিক আদালতের রায় “অমানবিক” ছিল এবং এতে ন্যায়বিচারের চরম ঘাটতি ছিল।

আসামিদের খালাসের নির্দেশ

রায় ঘোষণার আগে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম বলেন, “মামলার বিষয়বস্তু বিস্তৃত, তাই সংক্ষিপ্ত আদেশ ঘোষণা করা হবে। ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মাস, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রায় বাংলায় দেওয়া হচ্ছে।” এরপর আদালত রায় ঘোষণা করেন এবং বলেন, “আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সবাইকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হলো। আমরা চাই না তারা আর এক সেকেন্ডও কারাগারে থাকুক। এখনই মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হলো।”

আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা

আসামিদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, যাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান খান, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ ও অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম মুকুল।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মজিবুর রহমান।

রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া

রায়ের দিন পাবনা বিএনপির শত শত নেতাকর্মী এনেক্স কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে অবস্থান নেন। রায় ঘোষণার পর তারা উল্লাসে ফেটে পড়েন।

 

শেয়ার করুন