১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অ্যাসিডিটি থেকে বাঁচতে সকালে যেসব খাবার খাবেন না

শেয়ার করুন

অ্যাসিডিটি থেকে বাঁচতে সকালে
আপনি কি কখনো বুকের হাড়ের কাছে বা পেটের উপরের অংশে অসহ্য জ্বালাপোড়া অনুভব করেছেন? মাথা ঘোরার কারণে কি বিভ্রান্ত বোধ করেন? যদি হ্যাঁ, তাহলে সম্ভবত আপনার অ্যাসিড রিফ্লাক্স (অম্লপ্রবাহ) রয়েছে, যা একটি খুব সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। সহজভাবে বললে, অ্যাসিড রিফ্লাক্স হলো খাদ্যনালীর জ্বালা, যা পেট এবং গলার সংযোগকারী নলকে প্রভাবিত করে। এটি ঘটে যখন পেটের অ্যাসিড খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে। কিছু খাবার পেটে অ্যাসিড উৎপাদন বাড়ায় এবং সেগুলো সকালের নাস্তায় এড়িয়ে চলা উচিত। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর খাবারগুলো কী কী? চলুন জেনে নেওয়া যাক:

### ১. **লেবুজাতীয় ফল এবং টমেটো**
আপনি যদি সকালের নাস্তায় কমলার জুস খেতে পছন্দ করেন, তাহলে তা বাদ দেওয়াই ভালো। যদিও এই তালিকায় ফল এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবার দেখে অবাক হতে পারেন, টমেটো, কমলা এবং লেবুর মতো সাইট্রাস ফল অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণ হতে পারে। যদি আপনার ঘন ঘন অ্যাসিড রিফ্লাক্স হয়, তবে এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলুন। টমেটোতে সাইট্রিক এবং ম্যালিক অ্যাসিড থাকে, যা পেটে অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড তৈরি করে এবং বুক জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে।

### ২. **অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট**
মাখন এবং পনিরের মতো চর্বিযুক্ত খাবার সকালের নাস্তায় অতিরিক্ত খাওয়া হলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। চর্বিযুক্ত খাবার পেট খালি হতে দেরি করায় এবং LES (Lower Esophageal Sphincter)-এর উপর চাপ কমায়। জাতীয় ডায়াবেটিস, হজম এবং কিডনি রোগ ইনস্টিটিউটের মতে, এটি অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ঝুঁকি বাড়ায়। রিফ্লাক্স এড়াতে ফ্যাট গ্রহণ কমানোর চেষ্টা করুন।

### ৩. **কফি বা চা**
সকালে খালি পেটে চা বা কফি পান করা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর অভ্যাসগুলোর মধ্যে একটি। কফি খাওয়ার আগে অন্তত ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। প্রথমে সকালের নাস্তা খান এবং তারপর চা বা কফি পান করুন। চা এবং কফিতে থাকা ক্যাফেইন অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। ক্যাফেইনমুক্ত চা বা হার্বাল টি বেছে নিন। তবে মনে রাখবেন, ক্যাফেইন ছাড়াও কফির অন্যান্য উপাদান অ্যাসিডিটি বাড়াতে পারে।

### ৪. **বিস্কুট এবং কুকিজ**
সকালের নাস্তায় অনেকেই চা বা কফির সঙ্গে বিস্কুট বা কুকিজ খেতে পছন্দ করেন। তবে এই খাবারগুলো পেটে অত্যন্ত অ্যাসিডিক পরিবেশ তৈরি করে। বিস্কুট এবং কুকিজে থাকা ময়দা, পরিশোধিত চিনি এবং দুগ্ধজাত উপাদান, চা বা কফির ক্যাফেইনের সঙ্গে মিশে অ্যাসিডিটি বাড়ায়। এছাড়াও, দোকান থেকে কেনা বিস্কুট এবং কুকিজে প্রিজারভেটিভ ও কৃত্রিম স্বাদ থাকে, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে।

### ৫. **ভাজা খাবার**
সকালের নাস্তায় ভাজা খাবার খাওয়া অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ভাজা খাবার খালি পেটে হজম করা কঠিন, কারণ এতে ক্ষতিকর ফ্যাট থাকে। এই খাবারগুলো পেটের ভেতরের আস্তরণকে জ্বালাতন করে এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্স সৃষ্টি করে।

### অ্যাসিড রিফ্লাক্স এড়াতে করণীয়:
– **বেশিবার এবং ছোট অংশে খান:** একবারে বেশি খাওয়ার চেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খান।
– **খাওয়ার পর শুয়ে পড়বেন না:** খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়া বা ঘুমানো এড়িয়ে চলুন। মাধ্যাকর্ষণ পেটের অ্যাসিডকে তার অবস্থানে রাখতে সাহায্য করে।
– **ঘুমানোর আগে খাওয়া এড়িয়ে চলুন:** ঘুমানোর কমপক্ষে তিন থেকে চার ঘণ্টা আগে খাবার খান। মধ্যরাতে বা দেরিতে খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
– **খাওয়ার পর ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন:** খাওয়ার পর কয়েক ঘণ্টা কঠোর ব্যায়াম থেকে বিরত থাকুন। তীব্র ব্যায়ামের ফলে অ্যাসিড খাদ্যনালীতে প্রবেশ করতে পারে।

এই সহজ পদক্ষেপগুলো মেনে চললে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

শেয়ার করুন