
কার্প জাতীয় মাছের অব্যবহৃত অংশ ব্যবহার করে ‘ফিশ স্যুপ পাউডার’ (মাছের বায়ুথলি থেকে) এবং ‘ফিশ স্টক’ (মাছের পাখনা, ফুলকা, অপারকুলাম থেকে) তৈরি করে এসব খাদ্যদ্রব্যের গুণাগুণ পরীক্ষা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখার নেতৃত্বে এই গবেষণা পরিচালনা করেন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সাদিয়া রহমান মুনমুন ও মৌসুমী মণ্ডল। গবেষকরা জানিয়েছেন, মাছের ফেলে দেওয়া অংশ থেকে এসব খাদ্যদ্রব্য তৈরি করে মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এই গবেষণা ২০২৩ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে শেষ হয়। এই গবেষণার মাধ্যমে একটি মাস্টার্স থিসিস সম্পন্ন হয়েছে এবং ফলাফল বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গতকাল সোমবার গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক ফাতেমা বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ও বাজারে কার্প জাতীয় মাছ কাটার পর পাখনা, চোয়াল, বায়ুথলিসহ বিভিন্ন অংশ সাধারণত মানুষের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। এছাড়া মাছের ফেলে দেওয়া অংশ থেকে তৈরি খাদ্যদ্রব্য সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্যও অপ্রতুল। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে গবেষকরা ‘ফিশ স্যুপ পাউডার’ (মাছের বায়ুথলি থেকে) এবং ‘ফিশ স্টক’ (মাছের পাখনা, ফুলকা, অপারকুলাম থেকে) এর মতো ‘রেডি টু কুক’ খাদ্যদ্রব্য তৈরি করেছেন। গবেষণার জন্য বাকৃবির স্থানীয় বাজার থেকে কার্প মাছের পাখনা, অপারকুলাম ও বায়ুথলি সংগ্রহ করা হয়।
সহকারী গবেষক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সাদিয়া রহমান মুনমুন বলেন, ফিশ স্যুপ পাউডার ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং সোডিয়ামের একটি ভালো উৎস। গুণমান মূল্যায়নের গবেষণায় দেখা গেছে, এটি প্রোটিনেরও একটি ভালো উৎস হতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে ফিশ স্যুপ পাউডার উৎপাদন করা গেলে এটি বিক্রেতাদের জন্য আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হতে পারে। এছাড়া, সঠিকভাবে প্যাকেটজাত করে বিদেশে রপ্তানি করা গেলে এটি দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি সম্ভাবনাময় পণ্য হিসেবে কাজ করবে।
আরেক সহকারী গবেষক মৌসুমী মণ্ডল বলেন, কার্প জাতীয় মাছের পাখনা, ফুলকা এবং অপারকুলামের সঙ্গে পুঁইশাক, গাজর ও আলুর খোসার মতো বিভিন্ন শাকসবজি ৩০ মিনিট সিদ্ধ করে তার নির্যাস ছেঁকে নেওয়াই হলো ফিশ স্টক। এটি খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য সসের মতো ব্যবহার করা যায়। ফিশ স্টক বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা গেলে এটি মৎস্য ব্যবসায়ীদের আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হতে পারে। এছাড়া, এটি প্রোটিনের চাহিদা পূরণের একটি কার্যকর খাদ্যদ্রব্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। পাশাপাশি, মাছের ফেলে দেওয়া অংশ ব্যবহার করে পরিবেশ দূষণ রোধেও ভূমিকা রাখা সম্ভব।