
যেকোনো কাজ সুন্দর ও সুচারুরূপে পালনের জন্য পূর্ব প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি। অন্যান্য কাজের মতো আমল ও ইবাদতের ক্ষেত্রেও পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য সব আমলের মতো আগে থেকেই রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন এবং উম্মতকে এই মহিমান্বিত মাসে ইবাদতের জন্য প্রস্তুত হতে বলতেন। রমজানের প্রস্তুতিমূলক কিছু আমল নিম্নে তুলে ধরা হলো
### ১. রমজান প্রাপ্তির জন্য দোয়া করা
সব ইবাদতের মূল হলো দোয়া। আমলের তাওফিকের জন্য দোয়া করা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল। রমজান প্রাপ্তির জন্য তিনি রজব মাস থেকেই দোয়া করতেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, রজব মাস শুরু হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন,
**”হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।”** (বায়হাকি: ৩৫৩৪)
এই দোয়া তিনি শাবান মাসেও করতেন। নবীজির আমল অনুযায়ী রমজান মাস পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে কোনো বাধা নেই। বরং পূর্বসূরী অনেক আলেম থেকেও রমজান প্রাপ্তির জন্য দোয়া করার কথা বর্ণিত হয়েছে।
ইবনে রজব আল-হাম্বলি (রহ.) বলেন, মুয়াল্লা ইবনে ফজল বলেছেন,
**”তারা ছয় মাস দোয়া করতেন রমজান পাওয়ার জন্য এবং ছয় মাস দোয়া করতেন তাদের আমলগুলো কবুল হওয়ার জন্য।”**
ইয়াহিয়া ইবনে কাসির (রহ.) বলেন,
**”তারা দোয়ায় বলতেন, হে আল্লাহ! আমাকে রমজান পর্যন্ত নিরাপদ রাখুন, রমজানকে আমার জন্য নিরাপদ করুন এবং রমজানের আমলগুলো কবুল করে আমার কাছ থেকে রমজানকে বিদায় করুন।”** (লাতায়িফুল মাআরিফ: ১৪৮)
### ২. রমজানের দিনক্ষণ গণনা করা
রমজানের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসের তারিখের হিসাব রাখা এবং দিনক্ষণ গণনা করাও একটি সুন্নত আমল। এজন্য রজব মাসের ২৯ তারিখে চাঁদের সন্ধান করাও মুস্তাহাব। কারণ রমজানের প্রথম তারিখ জানার জন্য শাবানের তারিখগুলো জানা জরুরি। যদি তারিখ গণনা না রাখা হয় এবং এ ক্ষেত্রে অবহেলা করা হয়, তাহলে প্রথম রমজান নিয়ে গোলমাল তৈরি হতে পারে, ফলে রমজানের একটি রোজা নষ্ট হতে পারে। তাই রমজানের দিনক্ষণ গণনার জন্য তারিখ হিসাব রাখা উচিত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও দিনক্ষণ গণনা করতেন।
### ৩. রমজানের আগে বেশি বেশি রোজা রাখা
রমজানে দীর্ঘদিন রোজা রাখার দৈহিক ও মানসিক প্রস্তুতির জন্য শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখা সুন্নত। যদিও এই ব্যাপারে ভিন্নমত রয়েছে, তবে ওসামা ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এর কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন,
**”আমি নবীজিকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! শাবান মাসে আপনি যে পরিমাণ রোজা রাখেন, অন্য কোনো মাসে তো এতটা পালন করতে দেখি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস হওয়ার কারণে মানুষ এই মাসের ব্যাপারে উদাসীন থাকে। এ এমন একটি মাস, যে মাসে রবের নিকট আমল তুলে ধরা হয়। আমি চাই, রোজা পালনরত অবস্থায় আমার আমল তাঁর নিকট পেশ করা হোক।”** (নাসায়ি: ২৩৫৭)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে,
**”শাবানের তুলনায় অন্য কোনো মাসে নবীজিকে এত বেশি রোজা পালন করতে দেখিনি।”** (বুখারি: ১৯৬৯)
### ৪. সাধারণ মুসলমানদের রমজানের প্রতি উৎসাহী করে তোলা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদেরকে রমজানের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য বিভিন্নভাবে উৎসাহিত ও উদ্দীপিত করতেন। রমজানের ফজিলত সম্পর্কিত হাদিসগুলোর অধিকাংশই রমজানের পূর্বের বিভিন্ন বৈঠকে তিনি সাহাবিদের জানিয়েছেন। তিনি তাদের উৎসাহ দিয়ে বলতেন,
**”রমজান বরকতময় মাস, তোমাদের দরজায় উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোজা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরজ করে দিয়েছেন। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস হতে উত্তম। যে এর কল্যাণ হতে বঞ্চিত হলো, সে বঞ্চিত হলো মহা কল্যাণ হতে।”** (নাসায়ি: ২১০৬)
### ৫. রমজানের বিধান জানা ও আগমনে আনন্দ প্রকাশ করা
নিয়মকানুন ও বিধিনিষেধ ছাড়া রমজান বা অন্য কোনো ইবাদত ঠিকমতো পালন করা সম্ভব নয়। সাধারণ মুসলমানের কর্তব্য হলো, রমজানের পালিত যাবতীয় জিকির-আজকার ও অন্যান্য বিধি-বিধান সম্পর্কে পূর্ণ অবগতি লাভ করা। রমজান বিষয়ক বই-পত্র অধ্যয়ন করা এবং নির্ভরযোগ্য অডিও-ভিডিও প্রোগ্রাম শ্রবণ করে স্বচ্ছ ধারণা লাভের চেষ্টা করা।
রমজানের আগমনে আনন্দ প্রকাশ করা এবং এই মাসের ফজিলত সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ। রমজান হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ উপহার, তাই এর আগমনে খুশি প্রকাশ করা এবং এই মাসের ইবাদতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য।
এই প্রস্তুতিগুলো গ্রহণ করে আমরা রমজানের পূর্ণ সুফল লাভ করতে পারি এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে সক্ষম হব।