
সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন মডেলের মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শত শত বিক্রেতা। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে দেখছেন এবং পছন্দ হলে দরকষাকষির পর মোটরসাইকেল কিনে নিচ্ছেন। এভাবেই প্রতি হাটে প্রায় ২০০-২৫০টি মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। এটি দেশের অন্যতম বৃহৎ পুরনো মোটরসাইকেল হাটের চিত্র। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা এখানে আসছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা পৌর বাস টার্মিনালে বিশাল জায়গাজুড়ে এই মোটরসাইকেল হাটটি অবস্থিত। শুক্রবার জুমার নামাজের আগে থেকেই হাটে মোটরসাইকেল আসা শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা এই হাটে আসেন। বিভিন্ন মডেলের ৫০-১৫০ সিসির পুরনো মোটরসাইকেল সারিবদ্ধভাবে সাজানো থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। এই হাটে প্রায় ১৫০ জনের বেশি ব্যবসায়ী রয়েছেন। তারা পুরনো মোটরসাইকেল কিনে মেরামত করে নিয়ে আসেন। আবার কেউ কেউ নিজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল বিক্রির জন্যও নিয়ে আসেন। দুপুর ২টা থেকে রাত ৭-৮টা পর্যন্ত এই হাটে পুরনো মোটরসাইকেলের কেনাবেচা চলে।
এই হাটে মোটরসাইকেল প্রদর্শনের জন্য প্রতি মোটরসাইকেল বাবদ ৩০ টাকা নেওয়া হয়। মোটরসাইকেল বিক্রি হলে ক্রেতা ও বিক্রেতাকে ৭২০ টাকা দিতে হয়। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে হাট কর্তৃপক্ষকে ৫০০ টাকা দিতে হয়। প্রতি হাটে প্রায় এক থেকে দেড় কোটি টাকার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। ঢাকা, বরিশাল, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা এই হাটে আসেন। এখানে প্রতারণার কোনো সুযোগ নেই। নাম পরিবর্তনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র খুব সহজেই সম্পন্ন করা হয়। ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া এই হাটটি এখন দেশের বৃহত্তম পুরনো মোটরসাইকেল হাট হিসেবে পরিচিত।
লাভজনক হওয়ায় অনেক তরুণ এই পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন, যা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে মোটরসাইকেল কিনে এই হাটে নিয়ে আসেন। অনেকে নিজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল বিক্রি করতে বা নতুন মোটরসাইকেল কিনতে আসেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, পুরনো মোটরসাইকেল কেনাবেচা লাভজনক একটি পেশা। প্রতি হাটে একজন ব্যবসায়ী প্রায় ১০-১৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে মোটরসাইকেল কিনে মেরামত করে এখানে বিক্রি করেন।
নাইম হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, “গত এক বছর ধরে এই হাটে পুরনো মোটরসাইকেলের ব্যবসা করছি। আমার মতো প্রায় ১৫০ জনের বেশি ব্যবসায়ী রয়েছেন। প্রতি হাটে ২০০-৩০০ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। লাভজনক হওয়ায় এই পেশায় অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন।”
গাড়ির কাগজপত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা মূল মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাম পরিবর্তন করে দেই। নতুন মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ক্রেতা শোরুমে গিয়ে নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। এখানে কোনো ভোগান্তি নেই।”
পার্শ্ববর্তী জেলা কুষ্টিয়া থেকে আসা ক্রেতা যুবায়ের বলেন, “তুলনামূলক কম দামে মোটরসাইকেল পাওয়া যায় বলে এই হাটে এসেছি। সাধ্যের মধ্যে একটি মোটরসাইকেল কিনেছি। কাগজপত্র সব ঠিকঠাক আছে। কোনো ভোগান্তি ছাড়াই কেনাকেচা সম্পন্ন হয়েছে।”
হাটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর চৌধুরী রনি বলেন, “এই হাটে ১১০০ থেকে ১২০০ মোটরসাইকেল ওঠে। সরকারিভাবে এই হাট পরিচালিত হয় এবং প্রতি হাটে দুই লাখ থেকে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের সুবিধা আমরা নিশ্চিত করি। এখানে প্রতারণার কোনো সুযোগ নেই।”
চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. ইয়াকুব হোসেন মালিক বলেন, “এই হাটকে কেন্দ্র করে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমে এসেছে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গার অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।”