
মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের পরিপূর্ণতা হলো নারী জনমের মাধ্যমে পরিবারে সন্তানের আগমন। সন্তান একটি পরিবারের মধ্যে মায়া-মমতার কোমল পরশ নিয়ে আগমন বার্তা দেয়। নবজাতক পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য সুখের বার্তা, আর অপেক্ষা পূর্ণতা লাভের এক স্মরণীয় মুহূর্ত। নবজাতকের মাধ্যমেই মানব বংশের অগ্রগতি নিশ্চিত হয়, যা যুগে যুগে সৃষ্টির ধারায় চলতে থাকে।
মানব জীবন এবং মানবতা মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত ও অনুগ্রহের দ্বারা জীবিত থাকে, কারণ সন্তানদের জন্ম না হলে মানব জাতির অস্তিত্ব হারিয়ে যেত। আল্লাহ তাঁর পবিত্র কোরআনে মানব শিশুর সৃষ্টি প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়েছেন: “তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্তপিণ্ড থেকে।” (সূরা আলাক: ০২)
সন্তান-সন্ততি শুধু পিতা-মাতার জন্য শারীরিক ও মানসিক সুখের বাহকই নয়, তারা একটি পরিবারের জন্য সমাজে সফলতা ও সৌন্দর্য লাভের মাধ্যম। আল্লাহ বলেন, “ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য ও সুখ-শান্তির বাহন ও উপাদান।” (সূরা কাহাফ: ৪৬) সন্তানের মাধ্যমে পরিবারে সুখ, শান্তি এবং সফলতা আসে, এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদের বংশধারা এগিয়ে নিয়ে যায়।
তবে সন্তান প্রতিপালন শুধু একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া নয়, এটি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। পিতা-মাতা কখনোই এটি নিজেদের ইচ্ছা বা শক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, বরং সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছায় নির্ধারিত। মহান আল্লাহ কোরআনে বলেছেন: “সেই মহিমান্বিত সত্তা, যিনি তোমাদের মাতৃগর্ভে গড়ে তোলেন যেমন খুশি তেমন করে।” (সূরা আলে ইমরান: ০৫)
কখনও কখনও, দারিদ্র্য বা অভাবের কারণে নবজাতকের আগমন আশঙ্কার সৃষ্টি করতে পারে। তবে আমাদের ঈমানের অংশ হিসেবে বিশ্বাস রাখতে হবে যে, “রিজিকের মালিক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন।” তিনি বলেন: “তোমরা দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। আমিই তাদের রিজিক দেব এবং তোমাদেরও।” (সূরা বনী ইসরাইল: ৩১)
তাছাড়া, আল্লাহ সতর্ক করেছেন যে, “ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য এক মহাপরীক্ষা।” (সূরা আনফাল: ২৮) অর্থাৎ, সন্তান শুধু আল্লাহর বিশেষ পরীক্ষা নয়, এটি পিতা-মাতার জন্য এক নতুন দায়িত্ব ও সাধনার পথ।
সন্তান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। সবাই একে পায় না, আবার অনেকেই তা পায় আল্লাহর ইচ্ছায়। তাই, সন্তানের পিতা-মাতার কর্তব্য হলো, তাদের এমনভাবে প্রতিপালন করা যেন তারা পরিবার ও সমাজের উপকারী সদস্য হয়ে উঠতে পারে। সন্তান যেন কখনো পরিবারের জন্য বোঝা না হয়ে ওঠে, সেজন্য পিতা-মাতাকে সচেষ্ট থাকতে হবে।
আসলে একটি সংসারের পূর্ণতা সন্তানের মাধ্যমে আসে। সেই সন্তানদের মাধ্যমে প্রেম, প্রীতি ও শান্তির বন্ধন আরও শক্তিশালী হয়। মহান আল্লাহ আমাদের শিখিয়েছেন, “হে প্রভু! তুমি আমাকে ও আমার সন্তানদের নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী বানাও। প্রভু আমার, তুমি আমার দোয়া কবুল করো।” (সূরা ইবরাহিম: ৪০)