
সমাজ গঠনে হাক্কুল ইবাদ ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভূমিকা
মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী নিয়েই একটি সমাজ গড়ে ওঠে। পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা ছাড়া কাঙ্ক্ষিত সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ইসলামেও এ বিষয়টির প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে বারবার এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “সকল সৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার পরিবারের সদস্যবিশেষ। সৃষ্ট জীবের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় সেই ব্যক্তি, যে তার পরিবার-পরিজনের প্রতি অনুগ্রহ করে।” (মিশকাত শরীফ)
মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনের অধিকার
হাক্কুল ইবাদ পালনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের অধিকার আদায় করা। হাদিসে মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহারকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন,
“আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার ক্ষেত্রে কে সবচেয়ে বেশি অধিকারী?”
রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তর দিলেন,
“তোমার মা।”
লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলেন,
“তারপর কে?”
তিনি (সা.) বললেন,
“তোমার মা।”
লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলেন,
“তারপর কে?”
তিনি বললেন,
“তোমার মা।”
চতুর্থবারে তিনি বললেন,
“তোমার বাবা।”
(বুখারি ও মুসলিম শরীফ)
হাদিসে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, নিকট আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবের প্রতিও সদাচরণ করা জরুরি।
পাড়া-প্রতিবেশীর প্রতি সদাচরণ
ইসলামে পাড়া-প্রতিবেশীর অধিকার আদায়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।” (বুখারি শরীফ)
বিপদগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের সাহায্য
পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীদের ছাড়াও বিপদগ্রস্ত ও অসহায় মানুষদের সাহায্য করার নির্দেশ ইসলামে রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া কর, তাহলে যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।”
আরেকটি হাদিসে তিনি বলেছেন,
“বিধবা ও নিঃস্বদের জন্য উপার্জনকারী আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গকারীর মতো।” (মিশকাত শরীফ)
হাক্কুল ইবাদ পালনে অবহেলার শাস্তি
হাক্কুল ইবাদ কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়, এটি বাধ্যতামূলক। কেউ হাক্কুল ইবাদ আদায় না করলে বা কারো অধিকার নষ্ট করলে তাকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“আমার উম্মতের মধ্যে আসল নিঃস্ব সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন অনেক নামাজ, রোজা ও জাকাত নিয়ে আসবে, কিন্তু সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারও প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারও সম্পদ ভক্ষণ করেছে, কারও রক্তপাত করেছে এবং কাউকে আঘাত করেছে। তার নেকি অত্যাচারিত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। যদি তার নেকি শেষ হয়ে যায়, তবে তাদের পাপ তার ওপর চাপানো হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” (তিরমিজি শরীফ)
সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যম
হাক্কুল ইবাদ আদায় একটি সমাজকে শান্তির নীড়ে পরিণত করতে পারে। এর মাধ্যমে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সহযোগিতা এবং সুসম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব। সমাজের অবহেলিত ও অসহায় মানুষের অধিকার আদায় করে বৈষম্য দূর করা যায়।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হাক্কুল ইবাদ যথাযথভাবে পালনের তৌফিক দান করুন। আমিন।