
লালমনিরহাট জেলা তামাক চাষের ক্ষেত্রে দেশের শীর্ষস্থানীয় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর তামাক চাষ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে, যা জমির উর্বরতা কমানো এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তামাক চাষ বৃদ্ধির কারণ:
তামাকজাত কোম্পানিগুলোর প্রলোভন এবং অধিক মুনাফার আশায় কৃষকরা তামাক চাষে ঝুঁকছেন। এসব কোম্পানি একর প্রতি জমিতে বিনামূল্যে বীজ, সার, নগদ অর্থ এবং আগাম ঋণ সরবরাহ করে। ফলে কৃষকরা তামাক চাষে উৎসাহিত হলেও কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ উপেক্ষিত হচ্ছে।
তামাক চাষের বিস্তার:
কয়েক বছর আগে যেখানে ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষ হতো, সেখানে এখন তামাক চাষ হচ্ছে। লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলার পাশাপাশি তিস্তা নদীর চরাঞ্চলেও তামাক চাষ বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি তামাক চাষ হচ্ছে আদিতমারী উপজেলায়।
স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব:
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় জানিয়েছেন, তামাক চাষ ও এর ব্যবহারে শ্বাসকষ্ট, ক্যানসার, চর্মরোগসহ বিভিন্ন গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। তামাক চাষের ক্ষতিকর প্রভাব শুধুমাত্র চাষিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি শিশুদের এবং সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
তামাক চাষের পরিসংখ্যান:
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন জানিয়েছেন, এ বছর জেলার পাঁচ উপজেলায় মোট ১৫,০৫৭ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৯,৮৬৫ হেক্টর বেশি।
কৃষি অধিদপ্তরের উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জ:
তামাক চাষের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উঠান বৈঠক, সভা ও সেমিনার আয়োজন করছে। তবে কোম্পানিগুলোর প্রলোভন এবং অধিক মুনাফার সুযোগের কারণে কৃষকরা এসব পরামর্শ অনুসরণ করছেন না।
সমাধানের সুপারিশ:
১. তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে সরকারি নীতিমালা শক্তিশালী করা।
২. তামাক কোম্পানির প্রলোভনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন।
৩. বিকল্প লাভজনক ফসল চাষে প্রণোদনা ও সহায়তা প্রদান।
৪. তামাক চাষের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি।
৫. তামাক চাষি কৃষকদের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়ন।
তামাক চাষের বৃদ্ধি শুধু জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি নয়, এটি দেশের কৃষি জমির ভবিষ্যৎ উৎপাদন ক্ষমতাও হ্রাস করছে। যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ না করলে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও বাড়বে।