১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার
১লা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেষ পর্যন্ত কি গ্রিনল্যান্ড দখলে নেবেন ট্রাম্প?

শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ২০১৯ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তিনি এই বিশাল বরফাচ্ছাদিত দ্বীপটি কিনতে চেয়েছিলেন। তবে এবার তিনি বিষয়টি আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, অর্থনৈতিক বা সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতেও তিনি প্রস্তুত।

গ্রিনল্যান্ড কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড, যার ৮০ শতাংশ বরফে আচ্ছাদিত, ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। এতে রয়েছে অব্যবহৃত খনিজ সম্পদের বিপুল ভাণ্ডার। এছাড়া, আর্কটিক অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়ছে, যেখানে রাশিয়া ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে ডেনমার্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ডেনমার্কের পক্ষ থেকে সাফ জানানো হয়েছে, “গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়, এবং এর আঞ্চলিক অখণ্ডতা অবশ্যই রক্ষা করা হবে।”

ট্রাম্পের বক্তব্য ও সমালোচনা
ট্রাম্প বলেছেন, গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় এবং তার এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য সামরিক বিকল্প নাকচ করা যায় না। তবে এই মন্তব্য ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ড উভয়ের কাছেই অবিশ্বাস ও ক্ষোভের কারণ হয়েছে।

রয়্যাল ডেনিশ ডিফেন্স কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মার্ক জ্যাকবসেন মনে করেন, ট্রাম্প আসলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে চান এবং তার মন্তব্যগুলো হয়তো কৌশলগতভাবে করা হয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এই ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান
ডেনমার্ক সম্প্রতি গ্রিনল্যান্ডের জন্য দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামরিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা দ্বীপটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য। গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “স্বাধীনতা গ্রিনল্যান্ডের লক্ষ্য, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে।”

স্বাধীনতার জন্য গ্রিনল্যান্ডে সমর্থন রয়েছে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে এটি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কম। দ্বীপটির অর্থনীতি ডেনমার্কের ভর্তুকির ওপর নির্ভরশীল। স্বাধীনতার পক্ষে ভোটের জন্য নিশ্চিত করতে হবে যে, বর্তমান স্বাস্থ্যসেবা ও কল্যাণব্যবস্থার সুবিধাগুলো অব্যাহত থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক চাপ
ট্রাম্পের অর্থনৈতিক চাপ এবং সম্ভাব্য শুল্ক আরোপ ডেনমার্কের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডের ওপর সামরিক নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় করার চেষ্টা করতে পারে। বর্তমানে গ্রিনল্যান্ডে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে রয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতার ইস্যুটি ভবিষ্যতে আরও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিতর্কের একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে একটি মুক্ত সংস্থা প্রতিষ্ঠা, যা দ্বীপের জন্য কিছুটা স্বায়ত্তশাসন ও আন্তর্জাতিক কর্তৃত্ব আনতে পারে। তবে গ্রিনল্যান্ড যদি স্বাধীন হয়, তবুও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব এড়ানো সম্ভব হবে না।

এই বিতর্কের মধ্যে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য একটি বড় ভূ-রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। এটি শুধু ডেনমার্কের জন্য নয়, পুরো পশ্চিমা জোটের জন্যও এক অশুভ বার্তা বহন করে।

 

শেয়ার করুন