
আজকে আমি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ ধারা নিয়ে আলোচনা করবো। বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে স্বামী- স্ত্রীর বিবাহের সময় বা বিবাহের পরবর্তী সময়ে বিবাহ বলবত রাখার শর্তে স্বামী তাহার স্ত্রীর নিকট বা তাহার পিতা,মাতা, অভিভাবক বা তাহার আত্মীয়র নিকট যৌতুক হিসেবে বিভিন্ন উপঢৌকন, দামী জিনিসপত্র, নগদ টাকা দাবী করে থাকে।
এমন কি অনেক ক্ষেত্রে যৌতুক নামক কূ-প্রথার দাবির মুখে অনেক সুখের সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে,অনেক ক্ষেত্রে যৌতুকের দাবীর মুখে স্বামী তাহার স্ত্রীকে ভংয়করভাবে আঘাত করিয়া গুরুত্বর জখম এমন কি খুনো- খুনির মত ঘটনা সমাজে অহরহ ঘটতে দেখা যায়।
তাই বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা থেকে এই যৌতুক নামক সামাজিক ব্যাধি দুর করার জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ ধারা যৌতুক দেওয়া বা নেওয়া কে অপরাধ হিসেবে গন্য করিয়া উহার শাস্তির বিধান নিশ্চিত করিয়াছে।
উক্ত আইনের ১১ ধারায় বলা হইয়াছে যদি কোন নারীর স্বামী অথবা স্বামীর পিতা, মাতা, অভিভাবক,আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি যৌতুকের দাবীর জন্য গুরুত্বরভাবে আঘাত করিয়া উক্ত নারীর মৃত্যু ঘটান বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করেন, কিংবা উক্ত নারীকে মারাত্ত্বক জখম করেন বা সাধারন জখম করেন তাহা হইলে উক্ত স্বামী, স্বামীর পিতা, মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা উক্ত ব্যক্তি মৃত্যু দন্ডে বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টার জন্য যাবজ্জীবন কারা দন্ডে দন্ডনীয় হইবে এবং উভয় ক্ষেত্রে একই সাথে জরিমানা দন্ডে ও দন্ডনীয় হইবে।
যদি আঘাতের কারণে আঘাত প্রাপ্ত ব্যক্তি গুরুত্বর জখম প্রাপ্ত হয় তবে অপরাধী ব্যক্তি বা ব্যক্তিগন যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হইবে অথবা অনধিক ১২ বৎসর কিন্তু অনূন্য ৫ বৎসরের সশ্রম কারা দন্ডে দন্ডনীয় হইবে এবং একই সাথে অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবে, যদি আঘাতের কারনে আঘাত প্রাপ্ত ব্যক্তি সাধারণ জখম প্রাপ্ত হয়, তবে তাহার জন্য অপরাধী ব্যক্তি বা ব্যক্তিগন অনধিক ৩ বৎসর কিন্তু অন্যুন ১ বৎসর সশ্রম কারা দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং একই সাথে অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হইবে।
আমাদের বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালত সমূহে নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে উক্ত ধারাটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
অনেক ক্ষেত্রে যৌতুকের দাবীর মুখে নির্যাতিত না হয়েও কথিত স্ত্রীলোকটি উক্ত ধারাটিকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করিয়া আদালতে মিথ্যা যৌতুকের দাবীর মুখে আঘাত প্রাপ্ত হওয়ার অভিযোগ দায়ের করিয়া নিরাপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানী করিয়া থাকে। বর্তমানে আইন আদালতে উক্ত ধারাটির ব্যাপকভাবে অপব্যবহার হওয়ার রীতি ও পরিলক্ষিত হচ্ছে।
তাই কোন স্ত্রীলোক যদি অপর কোন ব্যক্তিকে মিথ্যা যৌতুকের দাবীর মুখে আঘাত দানের অভিযোগে উক্ত ধারায় মামলা দায়ের করিয়া কোন ব্যক্তিকে অযাথা হয়রানী করে এবং বিজ্ঞ আদালতে স্বাক্ষ্য প্রমানে তাহার অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হয় তবে উক্ত ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি উক্ত মিথ্যা অভিযোগকারী স্ত্রীলোকের বিরুদ্ধে অত্র আইনের ১৭ ধারায় বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবে এবং তাহার অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত মিথ্যা অভিযোগকারীকে শাস্তি দিতে পারে।
উক্ত মিথ্যা অভিযোগের শাস্তির মেয়াদ অনধিক ৭ বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হইবে এবং একই সাথে অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবে।
আব্দুল জব্বার ফকির
এডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট,ঢাকা।
……