১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার
১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শনিবার থেকে সেন্টমার্টিন উন্মুক্ত, মানতে হবে ১২ নির্দেশনা

শেয়ার করুন

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন আগামী শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। টানা নয় মাস বন্ধ থাকার পর দ্বীপে পর্যটন পুনরায় চালু হলেও পরিবেশ সুরক্ষায় এবার ১২টি কঠোর নির্দেশনা মানতে হবে ভ্রমণকারীদের।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম জানিয়েছেন, সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এবার সরকারের জারি করা সব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি জানান, আগের মতো টেকনাফ নয়, এবার কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করবে। নিরাপত্তা ও পরিবেশগত কারণে উখিয়ার ইনানী থেকে জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপপরিচালক মহিবুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের অনলাইনে নিবন্ধন ছাড়া দ্বীপে যাওয়া যাবে না। ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমোদিত ওয়েব পোর্টাল থেকে টিকিট কিনতে হবে, যাতে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত নৌযানই সেন্টমার্টিনে চলাচল করতে পারবে। দ্বীপে পর্যটকের সংখ্যা, ভ্রমণের সময়সূচি ও রাত্রিযাপনও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধুমাত্র দিনের বেলায় দ্বীপ ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত্রিযাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে সীমিত পরিসরে রাত্রিযাপন অনুমোদন দেওয়া হবে, আর ফেব্রুয়ারিতে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে যেতে পারবেন।

দ্বীপের নাজুক প্রতিবেশ রক্ষায় বেশ কিছু নতুন বিধিনিষেধও কার্যকর হচ্ছে। সৈকতে রাতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, মোটরসাইকেল বা যেকোনো মোটরচালিত যান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ, কাছিম বা অন্যান্য প্রাণী ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করাও দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

পরিবেশ অধিদফতরের কক্সবাজার জেলা পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, “গত নয় মাস পর্যটক বন্ধ থাকায় দ্বীপের জীববৈচিত্র্য বিস্তার ঘটেছে। প্রবাল, লাল কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও কাছিমের সংখ্যা বেড়েছে।”

একই মত প্রকাশ করেছেন পরিবেশ সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস)-এর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক। তিনি বলেন, “পর্যটক সীমিত রাখার উদ্যোগের ফলেই সৈকতে মা কাছিমের ডিম পাড়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যা গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি।”

নিষিদ্ধ পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক—যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক বোতল, স্ট্র, সাবান বা শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক—বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির বোতল ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য ফ্লাস্ক বহনের পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন।

সরকারি কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই ১২টি নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করা গেলে সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রবালপ্রাচীর ও জীববৈচিত্র্য দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। এতে দ্বীপটি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের একটি সফল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।

সিএনআই/২৫

শেয়ার করুন