
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও মানবিক অগ্রাধিকারমূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জার্মানি। দুই দিনের ঢাকা সফরের শেষ দিনে মঙ্গলবার এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন বিষয়ক ভাইস মিনিস্টার জোহান সাতফ।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) জার্মান দূতাবাসের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জোহান সাতফের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে। তার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোটজ এবং বেশ কয়েকজন জার্মান কর্মকর্তা। সফরে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ঢাকা সফরকালে জোহান সাতফ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকিসহ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সুশাসন এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন জোরদারের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এছাড়া তিনি জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক অংশীদার এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন। সফরের একটি বড় অংশ ছিল কক্সবাজার পরিদর্শন। সেখানে তিনি রাষ্ট্রদূত রুডিগার লোটজকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। তারা ইউনিসেফ ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে জার্মানির সহায়তায় চলমান মানবিক প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন।
জোহান সাতফ বলেন, জার্মানি বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই ও মানবিক সমাধান খুঁজে বের করতে বদ্ধপরিকর। “রোহিঙ্গা জনগণের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের সুযোগ থাকা উচিত,” বলেন তিনি। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এই প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য।”
তিনি আশ্বস্ত করেন যে, মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত জার্মানি বাংলাদেশ, রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশে থাকবে।
দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, জার্মানি বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। দুই দেশের অংশীদারিত্ব মূলত টেকসই অর্থনৈতিক পরিবর্তন, জলবায়ু সহনশীলতা, জ্বালানি রূপান্তর এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সফর শুধু রাজনৈতিক কূটনীতি নয়, বরং মানবিক ও উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে জার্মানির অব্যাহত অঙ্গীকারের প্রতিফলন। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও শরণার্থী সংকটের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশের পাশে থেকে জার্মানি তার ভূমিকা আরও জোরদার করছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জোহান সাতফের সফর দুই দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করেছে। এই সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অভিন্ন মূল্যবোধ এবং টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক দায়িত্ববোধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
সিএনআই/২৫