
ভিন্ন স্বাদের চায়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন পাবনার আল-আমিন
পাবনার গাছপাড়ার দোকানি আল-আমিন হোসেন মাটির পেয়ালায় পরিবেশিত ভিন্ন স্বাদের চা বিক্রি করে জেলার চা-প্রেমীদের মন জয় করেছেন। তার দোকানে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ভিড় করেন, আর ছুটির দিনে সেখানে উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়।
শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে, পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের পৌরসভার সীমানা তোরণ গেটের পাশে অবস্থিত “আল-আমিন চত্বর” নামে পরিচিত তার চায়ের দোকান। প্রায় এক যুগ আগে ছোট পরিসরে শুরু করা এই দোকান এখন জেলার গণ্ডি পেরিয়ে দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে।
১৫ ধরনের চায়ের স্বাদে মাতোয়ারা ক্রেতারা
শুরুর দিকে ২৫ ধরনের চা বানালেও বর্তমানে আল-আমিনের দোকানে ১০-১৫ ধরনের চা পাওয়া যায়। এর মধ্যে স্পেশাল মালাই চা, মটকা চা, সর চা, করোনা চা, মসলা চা, তন্দুরি চা, স্পেশাল তন্দুরি চা সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়া রং চা, দুধ চা, আদা-লবঙ্গ চা, লেবু চা, কমলা চা-ও বিক্রি হয়। চায়ের পাশাপাশি দুই ধরনের শরবতের চাহিদাও রয়েছে, যা ঠান্ডা ও গরম উভয়ভাবেই পরিবেশন করা হয়।
চায়ের দাম ১০ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত, আর ভেষজ উপাদানে তৈরি শরবতের দাম ৩০ টাকা। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত তার দোকান খোলা থাকে।
মাটির পেয়ালায় চায়ের বিশেষত্ব
এখানে মাটির তৈরি বিশেষ খুঁড়িতে চা পরিবেশন করা হয়, যা স্বাদে ভিন্নতা যোগ করে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, “এখানে একবার চা খেলে আবার আসতেই হয়। দামও বেশি নয়, বাজেটের মধ্যেই মজাদার চা পাওয়া যায়।”
কর্মসংস্থান তৈরি ও মাসে লাখ টাকা আয়
আল-আমিনের দোকানে ৬ জন কর্মচারী কাজ করেন, যারা মাসে ১০-১৮ হাজার টাকা বেতন পান। চায়ের দোকানের জন্য প্রতিদিন ৩ মণ দুধ, ৮ কেজি চিনি, ২ কেজি খেজুর, ২ কেজি বাদাম, ২ কেজি কিশমিশ, ১ কেজি চা-পাতা ও ১০ কেজি অ্যালোভেরা ব্যবহার করা হয়।
আল-আমিন বলেন, “২০১২ সালে মাত্র ৮০০ টাকা নিয়ে চায়ের দোকান শুরু করি। প্রথম থেকেই ভিন্ন স্বাদের চায়ের ওপর জোর দিয়েছি।” বর্তমানে মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে লাখ টাকার বেশি আয় করেন তিনি।
চায়ের স্বাদ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ভিড়
শুধু পাবনার স্থানীয় বাসিন্দারাই নয়, আশপাশের জেলা থেকেও মানুষ আসে আল-আমিনের চা উপভোগ করতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সফরের যাত্রী থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই এখানে আসেন। ফেসবুকে চায়ের ভিডিও দেখে আগ্রহী হয়ে নতুন ক্রেতারাও ছুটে আসেন।
সফলতার গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আল-আমিন বলেন, “শখের বসে চায়ের ব্যবসা শুরু করলেও এটি এখন আমার জীবিকার প্রধান উৎস। আমার লক্ষ্য আরও বড় পরিসরে ব্যবসা চালানো।”
এই চায়ের দোকান শুধু ব্যবসার জায়গা নয়, এটি পাবনার মানুষের জন্য এক মিলনস্থল হয়ে উঠেছে, যেখানে এক কাপ চায়ের স্বাদ নিতে প্রতিদিন শত শত মানুষ আসেন।