
অন্যের কাছে প্রয়োজনের সময় কিছু চাওয়া স্বাভাবিক এবং অভাবগ্রস্তকে সাহায্য করা সওয়াবের কাজ। কোরআন ও হাদিসে অভাবগ্রস্তদের সহায়তা করার গুরুত্ব ও ফজিলত তুলে ধরা হয়েছে। মুমিনের জন্য এটি একটি মহৎ গুণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা:
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের (ধনীদের) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত: ১৯)।
আরও বলেন, ‘তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে।’ (সূরা দাহর, আয়াত: ৮)।
হাদিসের আলোকে দানের গুরুত্ব:
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান অপর মুসলমানকে বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ পোশাক পরাবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৮৩৫)।
তবে প্রয়োজন ছাড়া অন্যের কাছে চাওয়ার অভ্যাস বা ভিক্ষাবৃত্তি ইসলামically নিন্দনীয়। এটি মানুষের বিরক্তি সৃষ্টি করে এবং দানের প্রতি অনীহা তৈরি করে।
ভিক্ষাবৃত্তির নিন্দা:
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অনবরত লোকের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করবে, কিয়ামতের দিন তার মুখমণ্ডলে মাংস থাকবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৮৮)।
আরেক হাদিসে সাহল বিন হান্যালিয়্যাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ভিক্ষা চায় অথচ তার প্রয়োজন মেটানোর মতো সম্পদ আছে, সে জাহান্নামের অঙ্গার সঞ্চয় করছে।’ সাহাবারা জানতে চাইলেন, প্রয়োজন মেটানোর মতো সম্পদ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘সকাল-সন্ধ্যার খাবার বা দিনের জন্য পেটভরে খাদ্য।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৬২৯)।
প্রকৃত মিসকীন কে?
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা ভিক্ষা করে দু-এক গ্রাস খাবার বা খেজুর নিয়ে ফিরে যায়, তারা প্রকৃত মিসকীন নয়। প্রকৃত মিসকীন হলো সেই ব্যক্তি, যার মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর সামর্থ্য নেই, কিন্তু লজ্জায় কাউকে জানায় না এবং কারো কাছে কিছু চায় না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৮৩)।
অভাবগ্রস্তকে সাহায্য করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। তবে অযথা ভিক্ষা করা বা প্রয়োজন ছাড়া অন্যের কাছে চাওয়া ইসলামে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। প্রকৃত মুমিনের উচিত, নিজে কাজ করে উপার্জন করা এবং অভাবগ্রস্তদের প্রতি সদয় হওয়া।