
-একের পর এক গতিময় ডেলিভারিতে জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্কে গতির ঝড় তুলেছিলেন নাহিদ রানা। ডানহাতি পেসারের গতিতে পরাস্ত হয়ে উইকেট দিয়ে গেছেন ক্রেইগ ব্রার্থওয়েট, কাভেম হজ, আলজারি জোসেফরা। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো নাহিদ পেয়েছেন পাঁচ উইকেটের দেখাও। তরুণ পেসারের এমন বোলিংয়ে প্রথম ইনিংসে ১৮ রানের লিডও পায় বাংলাদেশ। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে শাহাদাত হোসেন দিপু, সাদমান ইসলাম, জাকের আলী অনিক মেহেদী হাসান মিরাজদের ব্যাটে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯৩ রান তুলেছে সফরকারীরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২১১ রানে এগিয়ে থেকে চতুর্থ দিন সকালে ব্যাটিংয়ে নামবেন জাকের এবং তাইজুল ইসলাম।
কিংস্টোনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে ১৮ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। জেইডেন সিলসের অফ স্টাম্পের বাইরের গুড লেংথ ডেলিভারিতে ডিফেন্স করতে গিয়ে এজ হয়ে দ্বিতীয় স্লিপে থাকা অ্যালিক অ্যাথানাজেকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন মাহমুদুল হাসান জয়। রানের খাতা খুলতে না পারা ডানহাতি ওপেনার পুরো সিরিজ জুড়েই প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৪ ইনিংসে মাত্র ১৪ রান করেছেন জয়। তরুণ ওপেনার ফেরার পর শুরু থেকেই দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী ছিলেন দিপু।
তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিচ্ছিলেন ওপেনার সাদমানও। তাদের দুজনের ব্যাটে বিশেষ করে দিপুর আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে শুরুর ধাক্কা সামলে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাংলাদেশ। তবে ড্রিংকস ব্রেকের পর উইকেট হারায় সফরকারীরা। আলজারি জোসেফের গুড লেংথ ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় সিলসকে ক্যাচ দিয়েছেন ২৬ বলে ২৮ রান করা দিপু। ব্যাটিংয়ে এসে মিরাজও দ্রুত রান তুলতে থাকেন। শুরু থেকে সাবধানী ব্যাটিং করতে থাকা সাদমানও তাদের পথে হাঁটেন। তাতে ওয়ানডে মেজাজে রান তুলে মাত্র ২৯ বলে পঞ্চাশ রানের জুটি গড়েন মিরাজ ও সাদমান।
চা-বিরতিতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশকে বিপদে পড়তে দেননি তারা। তবে বিরতি থেকে ফিরেই দ্বিতীয় ওভারে উইকেট হারায় সফরকারীরা। প্রথম ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করা সাদমান এবারও হাঁটছিলেন একই পথে। তবে শামার জোসেফের অফ স্টাম্পের বেশ খানিকটা বাইরের বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলার চেষ্টায় এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। হাফ সেঞ্চুরির আক্ষেপে পোড়া বাঁহাতি ওপেনারকে ফিরতে হয় ৪৬ রানের ইনিংস খেলে। সাদমানের পর মিরাজকেও নিজের শিকার বানান শামার জোসেফ। ডানহাতি পেসারের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে খেলার চেষ্টা করেছিলেন মিরাজ।
ব্যাটে ছুঁয়ে যাওয়ার শব্দ হওয়ায় বোলার আবেদন করলেও বাকি ফিল্ডারদের মাঝে তেমন আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে শামার জোসেফের চাওয়ায় রিভিউ নেন অধিনায়ক ব্রার্থওয়েট। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল জশুয়া ডি সিলভার গ্লাভসে যাওয়ার আগে ব্যাট ছুঁয়ে গেছে। ফলে সাদমানের মতো হাফ সেঞ্চুরি আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হয় মিরাজকেও। বাংলাদেশের অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ৪২ রান। মিরাজ ফেরার পর জাকেরকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন লিটন দাস। তাদের দুজনের জুটি ভেঙেছেন জাস্টিন গ্রিভস।
উইকেটের খোঁজে আচমকা অফ কাটার ডেলিভারি করেছিলেন তিনি। তবে গ্রিভসের ডেলিভারিটি অনেকটা অফ স্পিনারের মতো অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে টার্ন করে লিটনের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বল স্টাম্পে আঘাত করে। ২৫ রান করা লিটনের বিদায়ে ভেঙেছে জাকেরের সঙ্গে ৪১ রানের জুটি। শেষ বিকেলে বাংলাদেশকে আর কোন উইকেট হারাতে দেননি জাকের ও তাইজুল। আলোকস্বল্পতায় দিনের খেলা শেষের আগে ২৯ রানে অপরাজিত জাকের এবং ৯ রানে অপরাজিত তাইজুল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে শামার জোসেফ দুটি উইকেট নিয়েছেন।
রিপ্লেতে দেখা যায় বল লিটনের গ্লাভসে যাওয়ার আগে ব্যাটের কানায় স্পর্শ করেছে।
প্রথম স্পেলে বাজিমাত করা নাহিদকে বোলিংয়ে ফেরানো হয়েছে লাঞ্চের একটু আগে। বোলিংয়ে এসেই বাংলাদেশকে উইকেট এনে দিয়েছেন ডানহাতি এই পেসার। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় নাহিদকে আক্রমণের চেষ্টা করছিলেন আলজারি জোসেফ। বাংলাদেশও তাই মাহমুদুল হাসান জয়কে সীমানায় পাঠিয়ে দেয়। তবে আলজারির বিপক্ষে নাহিদ করেছিলেন স্লোয়ার ফুলটস। সেটা বুঝতে না পেরে শর্ট মিড অফে থাকা মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৭ রান করা এই ব্যাটার। দিনের প্রথম সেশনের পুরোটা সময় দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬৫ রান তোলার সেশনে সফরকারী বোলাররা নিয়েছেন ৭ উইকেট।
লাঞ্চ থেকে ফিরেই দ্বিতীয় ওভারে উইকেটের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। মিরাজের দারুণ এক ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন শামার জোসেফ। পরবর্তীতে কেমার রোচকে ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৬ রানে অল আউট করে বাংলাদেশ। এদিকে রোচকে ফিরিয়ে প্রথমবারের মতো টেস্টে ৫ উইকেটের দেখা পেয়েছেন নাহিদ। ডানহাতি পেসারের দারুণ এক ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন রোচ। রিভিউ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা কাজে আসেনি। নাহিদের পাশাপাশি হাসান দুটি এবং একটি করে উইকেট পেয়েছেন তাসকিন, তাইজুল এবং মিরাজ। স্বাগতিকদের ১৪৬ রানে গুঁড়িয়ে দেয়ায় ১৮ রানের লিড পেয়েছে বাংলাদেশ।-