১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার
১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তিস্তা প্রকল্প: সমাধান নাকি নির্বাচনী কৌশল?

শেয়ার করুন

উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন–সংগ্রামের সঙ্গে তিস্তা নদীর সম্পর্ক গভীর। বর্ষায় ভয়াবহ বন্যা, শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্যতা—এই দুই চরম পরিস্থিতির মধ্যেই বছরজুড়ে লড়াই করে নদীতীরের মানুষ। নাব্য সংকট, চর জেগে ওঠা, কৃষি ক্ষতি আর নদীভাঙনে তাদের জীবন আরও কঠিন হয়ে উঠছে। এমন বাস্তবতায় তিস্তা নিয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ স্থানীয়দের কাছে বেঁচে থাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে আবার আলোচনায় এসেছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা। প্রশ্ন উঠছে—এটি কি বাস্তব উন্নয়ন, নাকি নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কৌশল?

তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ–ভারতের টানাপোড়েন দীর্ঘদিনের। ১৯৮৩ সালের অন্তর্বর্তী চুক্তি কিংবা ২০১১ সালের স্থায়ী চুক্তির খসড়া—কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের আপত্তির পর বিষয়টি আরও জটিল হয়।

এ অবস্থায় চীনের অংশগ্রহণে আবারও প্রকল্পটি আলোচনায় এসেছে। চীনা দূতাবাসের প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যে প্রাথমিক জরিপ শেষ করেছে। প্রথম দশ বছরে নদীভাঙন প্রতিরোধ, স্থায়ী বাঁধ, সেচব্যবস্থা উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ইআরডি প্রকল্পের খসড়া চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে, এবং সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হতে পারে বলে চীনা পক্ষ জানানো হয়েছে।

চীনা প্রতিনিধিরা এই প্রকল্প নিয়ে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও বিভিন্ন নদী–রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠকও করেছে।

রিভারাইন পিপল–এর গবেষণা বলছে, তিস্তার ভাঙন ও প্লাবনে প্রতি বছর পাঁচ জেলার মানুষের ক্ষতি ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি। বহু পরিবার জমি–বাড়ি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ—প্রতি নির্বাচনের সময় তিস্তা নিয়ে বড় বড় প্রতিশ্রুতি এলেও বাস্তবায়ন দেখা যায় না; বরং এটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, তিস্তা এখন শুধু নদী–ব্যবস্থাপনা নয়, উত্তরবঙ্গের মানুষের আবেগ ও ভোট–রাজনীতির কেন্দ্রীয় ইস্যু। আগের সরকারও চীনা কোম্পানির সঙ্গে স্যাটেলাইট সিটি ও নদী–ব্যবস্থাপনার একটি বড় প্রকল্পে আগ্রহ দেখালেও ভারতের সঙ্গে পানিবণ্টন ইস্যুতে জটিলতা থাকায় তা এগোয়নি।

সবশেষে স্থানীয়দের বড় প্রশ্ন—এই ১২ হাজার কোটি টাকার তিস্তা প্রকল্প কি সত্যিই তাদের দীর্ঘদিনের দুঃখ–কষ্ট দূর করবে, নাকি নির্বাচনের আগে আবারও একটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে?

সিএনআই/২৫

শেয়ার করুন