১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার
১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিক্ষা ক্যাডারে তিন বিধির জটিলতায় থমকে পদোন্নতি

শেয়ার করুন

ক্যাডার সার্ভিসের সবচেয়ে বড় শাখা সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের পদোন্নতি প্রক্রিয়া গভীর অনিশ্চয়তায় পড়ে আছে তিনটি আলাদা বিধিমালার জটিলতায়। সাড়ে ১৬ হাজার কর্মকর্তার এই ক্যাডারে পদোন্নতি–সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এখন ঝুলে আছে ১৯৮১, ২০০০ ও ২০১৮ সালের বিধিমালা অনুসরণের ভিন্নতার কারণে। ক্যাডার ও আত্তীকৃত কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা নিয়ে অসংগতি, ব্যাচভিত্তিক বৈষম্য ও নানান রিট মামলার ফলে পুরো পদোন্নতি ব্যবস্থা কার্যত স্থবির হয়ে গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, শিক্ষা ক্যাডারে তিন টায়ারে পদোন্নতি হয়—প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক। বর্তমানে তিন টায়ারই বিধি–জটিলতায় আটকে আছে। আত্তীকৃত ১ হাজার ৪০০ কর্মকর্তাকে ৫৪টি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জ্যেষ্ঠতা দেওয়ার কারণে প্রভাষক পর্যায়ের পদোন্নতি আটকে যায়। এর প্রভাব পড়ে পরবর্তী দু’টি ধাপেও। ফলে ৫ হাজার ৭৫৪ জনকে পদোন্নতির প্রস্তাব থাকলেও প্রায় ২ হাজার ৩০০ কর্মকর্তা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বাইরে থেকে যাচ্ছেন।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আত্তীকৃত শিক্ষকদের যোগদান–তারিখ নির্ধারণে দীর্ঘদিনের অসংগতি বর্তমানে বড় বাধা। নিয়ম অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে সার্ভিস গণনা হওয়ার কথা থাকলেও ২০১২–২০২০ পর্যন্ত ১৫৪টি প্রজ্ঞাপনে যোগদানের তারিখকেই সার্ভিস শুরু হিসেবে ধরা হয়েছে, যা সরকারি চাকরি আইন ও জ্যেষ্ঠতা বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে আত্তীকৃতদের কেউ কেউ পুরোনো ব্যাচের আগে পদোন্নতির দাবি করছেন। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে একাধিক মামলা চলমান থাকায় মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা বিচারাধীন অবস্থায় পদোন্নতি না দেওয়ার মত দিয়েছে।

সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ ও ১৯৮১ সালের জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা অনুযায়ী পরে যোগদানকারী কোনো কর্মকর্তা আগে যোগদানকারীকে অতিক্রম করতে পারেন না। কিন্তু কিছু আত্তীক্ষণের প্রজ্ঞাপনে ভিন্ন গণনা প্রয়োগ করায় জ্যেষ্ঠতা তালিকা পরস্পরবিরোধী হয়ে গেছে। ফলে যোগ্যতার তালিকা তৈরি, ন্যূনতম চাকরির মেয়াদ নির্ধারণসহ প্রক্রিয়াগত কাজগুলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় তিন বিধিকে একত্রে সমন্বিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে মাউশি নির্বাচন–তপশিল ঘোষণার আগেই বড় পরিসরে পদোন্নতি দেওয়ার অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ৫ হাজার ৭৫৪ জনকে তিন স্তরের পদোন্নতির প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এর মধ্যে সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক পদে ১ হাজার ৩১ জন, সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী পদে ২ হাজার ৭০০ জন এবং প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে ২ হাজার ২৩ জনকে প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে মামলার কারণে প্রভাষক পর্যায়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে।

ইতোমধ্যে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য ডিপিসির দুই দফা বৈঠক শেষ হয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাচ ১৪তম ও ১৬তম বিসিএসের অধিকাংশই আগামী দুই বছরের মধ্যে অবসর নেবে বলে অধ্যাপক পদের শূন্যতা বাড়বে। দেশে ১ হাজার ২০০–র বেশি প্রশাসনিক, একাডেমিক ও প্রেষণ–পদে অধ্যাপক প্রয়োজন হওয়ায় দ্রুত পদোন্নতি অপরিহার্য বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক বি এম আব্দুল হান্নান জানান, সর্বোচ্চসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মজিবুর রহমান বলেন, আইন–সংক্রান্ত জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত পদোন্নতি দেওয়ার সম্ভাব্য উপায় খোঁজা হচ্ছে এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনার অপেক্ষা করা হচ্ছে।

সিএনআই/২৫

শেয়ার করুন