১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার
১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতি: নির্বাচনে অনিশ্চয়তা

শেয়ার করুন

।।শেখ শাহরিয়ার।জেলা প্রতিনিধি (খুলনা)।।

খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন নিয়ে তীব্র অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ ১২ মাস হলেও ৫ আগস্টের পর গঠিত এডহক কমিটি পার করেছে ১৬ মাস। দু’দফা তফসিল ঘোষণা করেও ভোট গ্রহণ হয়নি। পরাজয়ের আশঙ্কায় নানা অজুহাতে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলছে একাধিক সংগঠন।

৫ আগস্টের আগে সমিতির সভাপতি ছিলেন সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. সাইফুল ইসলাম। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পরদিনই পাঁচ সদস্যের এডহক কমিটি গঠিত হয়। পরে ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে ‘সাধারণ সভা’র সিদ্ধান্ত দেখিয়ে নির্বাচন স্থগিত করা হয়।

১৫ মাস পর আবার তফসিল ঘোষণা হলেও একই কায়দায় নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়।

স্বতন্ত্র, জামায়াতপন্থি ও বিএনপিপন্থি গ্রুপের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

স্বতন্ত্র আইনজীবী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাড. বেগম আক্তার জাহান রুকু সরাসরি অভিযোগ করে বলেন,
“গত ১ বছর ৪ মাস এডহক কমিটির কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে—এদের ওপর আস্থা রাখা যায় না। এরা নব্য ফ্যাসিস্ট। পদত্যাগ করে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে।”

জামায়াত সমর্থিত খায়ের–জাকির পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাড. আবুল খায়ের মনে করেন—
“এডহক কমিটি দুইবার নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তলবি সভায় কথা বলার সুযোগও দেওয়া হয়নি। অগঠনতান্ত্রিকভাবে ভোট স্থগিত হয়েছে। সাধারণ আইনজীবীদের স্বার্থেই নতুন কমিটি দিয়ে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া জরুরি।”

এ এম এম মোমেনুজ্জামান টুলুর মন্তব্য—
“বর্তমান সময় আগের মতো নয়। বিতর্কিত ব্যক্তিদের সরিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুনভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।”

বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল, খুলনার সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম পান্নার অভিযোগ—
“৫ আগস্ট পর সবাই মিলে এডহক কমিটি গঠন করলেও এখন কয়েকজনের অদৃশ্য কারণে নির্বাচন বন্ধ রাখা হচ্ছে। বিএনপি প্যানেল দিতে পারেনি, তাদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণেই ভোট পিছিয়ে যাচ্ছে।”

এডহক কমিটির সদস্য আওছাফুর রহমানের দাবি—
“জামায়াতপন্থিদের কাছে হেরে যাওয়ার ভয়ে বিএনপি নির্বাচন এড়িয়ে যাচ্ছে।”

স্বতন্ত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিহির কান্তি ঘোষ বলেন,
“পুরনো এডহক কমিটি ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে বাধ্য করতে হবে। নতুন কমিশন গঠন করে ২০২৫ সালেই নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে।”

অভিযোগ অস্বীকার করে সমিতির সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম রুবা বলেন—
“৯৪ জনের স্বাক্ষরে সাধারণ সভার সিদ্ধান্তে নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। আমরা তো তফসিল ঘোষণা করেছি। আবার রিকুইজিশন দিলে সভা ডেকে সবার মতামতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাড. শেখ আব্দুল আজিজ জানান—
“সমিতির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। বার যখন বলবে তখনই নির্বাচন হবে।”

বিভিন্ন পক্ষের পরস্পরবিরোধী অবস্থান, রাজনৈতিক প্রভাব ও এডহক কমিটির দ্বিধাদ্বন্দ্বে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন এখন ঘোর অনিশ্চয়তায়। কবে ভোট হবে—এ প্রশ্নের উত্তর মিলছে না কারও কাছ থেকেই।
সিএনআই/২৫

শেয়ার করুন