
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগ আমলে সাংবাদিকতার অবস্থা তলানিতে গিয়ে ছিল। হাসিনার আমলে সাংবাদিকতার দুর্বৃত্তায়ন থেকে বের হওয়ার চেষ্টা চলছে।
বৃহস্পতিবার ( ৬ নভেম্বর) সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: ইশতেহারে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গ” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন, সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্ট্যাডিজ (সিজিএস) এর প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ড. মওদুদ আলমগীর পাভেল; বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির বিশেষ সহকারী ড. সাইমুম পারভেজ; গণফোরামের সভাপতি, সুব্রত চৌধুরী; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান;, সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন।
শফিকুল আলম বলেন, সরকারের সঙ্গে মিডিয়ার সম্পর্ক ১৯৪৭ সাল থেকে ওঠানামা করছে, কখনো ভালো অবস্থায়, কখনো আবার খারাপ অবস্থায়। আইয়ুব খানের সময় সংবাদপত্রে স্বাধীনতা ছিল, কিন্তু ৯০ এর পর সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা পেয়েছিলেন কেয়ারটেকার সরকারের আমলে। আওয়ামী লীগ আমলে সাংবাদিকতার অবস্থা তলানিতে গিয়ে ছিল। হাসিনার আমলে সাংবাদিকতার দুর্বৃত্তায়ন থেকে বের হওয়ার চেষ্টা চলছে। বর্তমানে অনেকে মবকে ভয় পাচ্ছেন, তবে আমরা কখনো কোনো নিউজ নিয়ন্ত্রণ করবো না। এখন প্রশ্ন হলো, সামনে যদি রাজনৈতিক সরকার আসে, তাহলে কী এ সংস্কৃতি থাকবে? বর্তমানে এমন মানুষও মিসইনফরমেশন ছড়াচ্ছেন যারা ভালো জানেন, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পর্যন্ত। সরকার মিসইনফরমেশন নিয়ে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে, বিশেষ করে সেন্টমার্টিন এবং মাইলস্টোন নিয়ে ভুয়া খবরের পরিমাণ ছিলো অযাচিত। চট্টগ্রাম পোর্ট এবং উত্তরপাড়া নিয়ে যে পরিমাণ মিথ্যা খবর ছড়ানো হয়েছে, তা অকল্পনীয়।”
বিদেশে মিসইনফরমেশন ছড়ালে জরিমানা করা হয়, কিন্তু আমাদের দেশে তা নেই। প্রতিদিন টকশোতে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। আমরা মেটাকে ফেসবুকে মিসইনফরমেশন নিয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেছি, কিন্তু এটা দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া।
প্রেস সচিব বলেন, ভবিষ্যতে ক্ষমতাসীন সরকারকে মিসইনফরমেশন মোকাবিলার বিষয়ে ব্রেইনস্টর্মিং করা উচিত। যদি আমরা মিসইনফরমেশন ট্যাকেল করতে না পারি, তবে ভবিষ্যতের গণতন্ত্র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
জিল্লুর রহমান অনুষ্ঠানের শুরুতে বলেন, “বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় জনগণ দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে, তবে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও সেই লড়াই অব্যাহত রয়েছে।” তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭৫ সালে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল এবং আজও সেই প্রভাব বিদ্যমান।
তিনি আরও বলেন, “গণমাধ্যমের রূপ বদলেছে, কিন্তু সংস্কৃতি বদলায়নি।” সিজিএস-এর গবেষণায় দেখা গেছে, গণমাধ্যমের মালিকানা কাঠামো স্বাধীন সাংবাদিকতার জায়গা সংকুচিত করেছে। তিনি মফস্বল সাংবাদিকতার দুর্বলতা ও দুর্নীতি, এবং সাংবাদিকদের অপ্রতুল বেতন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি সামাজিক মাধ্যমের দুর্বলতা থেকে ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়া এবং গণমাধ্যমের ওপর তার নির্ভরশীলতা নিয়েও কথা বলেন।
ড. মওদুদ আলমগীর পাভেল বলেন, “সংবাদ এবং ফটোকার্ডের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। আমরা যত অধ্যাদেশের কথা বলি, তা সবই প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে আমরা আলোচনা করি না। সোশ্যাল মিডিয়াতে মিলিয়ন সাংবাদিক তৈরি হয়েছে, যাদের সংবাদ দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “এখন প্রিন্ট মিডিয়া সোশ্যাল মিডিয়া ফলো করছে। এটি আমাদের জন্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে ভাবতে হবে। দেশের মানুষ আস্থাবান হচ্ছে না যে সংবাদমাধ্যম তাদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।”