
বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের চিত্রে একদিকে আশার আলো, অন্যদিকে শঙ্কার ছায়া। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, কিন্তু রফতানি আয়ে দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা স্থিতিশীল হলেও সামগ্রিক অর্থনীতিতে চাপ বাড়ছে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে— যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। শুধু অক্টোবরেই দেশে এসেছে ২ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ১৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলার বেশি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রেমিট্যান্সের এই ধারাবাহিকতা রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব রাখছে। প্রবাসীদের বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করা, হুন্ডি প্রতিরোধ ও ব্যাংকিং প্রণোদনা বৃদ্ধির ফলে এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে দেশের গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার, আর আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী ২৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
তবে একই সময়ে রফতানি খাতে দেখা দিয়েছে ধীরগতি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে রফতানি আয় হয়েছে ৩৮২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রফতানি কমেছিল যথাক্রমে ২ দশমিক ৯৩ ও ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। ফলে প্রথম চার মাস শেষে মোট রফতানি প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ২ দশমিক ২২ শতাংশে।
রফতানি আয়ের বড় অংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে, যা টানা তিন মাস ধরে নিম্নমুখী। গত অক্টোবরে এই খাতে রফতানি কমেছে ৮ শতাংশ। অন্যদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, হোম টেক্সটাইল বেড়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ, পাটজাত পণ্যেও ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে মুদ্রাস্ফীতি, ক্রেতাদের সতর্কতা ও জ্বালানি সংকটের কারণে নতুন অর্ডার কমে গেছে, ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ উভয় ক্ষেত্রেই চাপ তৈরি হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, “অক্টোবরে রফতানি এতটা কমে যাওয়া অবশ্যই অ্যালার্মিং। এখনই নীতিনির্ধারকদের সতর্ক হতে হবে।”
অর্থনীতিবিদ ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, “রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক, তবে টানা তিন মাস রফতানিতে পতন উদ্বেগের কারণ। নীতিনির্ধারকদের এখন খাতভিত্তিক সমস্যা শনাক্ত করে সমাধানের পথে এগোতে হবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, রেমিট্যান্সের গতি বজায় রাখা এবং রফতানি খাতে নীতি সহায়তা ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। উভয় খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারলেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও সামগ্রিক অর্থনীতি টেকসই গতিতে এগিয়ে যাবে।
সিএনআই/২৫