১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার
১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুরা বাকারার ১৫২ আয়াত: সাফল্যের বিস্ময়কর ফর্মুলা

শেয়ার করুন

পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৫২ নম্বর আয়াতটি মুমিন জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ সাফল্যের গাইডলাইন। আল্লাহ তাআলা এখানে একটি সহজ কিন্তু গভীর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন- فَاذۡكُرُوۡنِیۡۤ اَذۡكُرۡكُمۡ وَ اشۡكُرُوۡا لِیۡ وَ لَا تَكۡفُرُوۡنِ ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করবো। আর আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’
এই আয়াত কেবল পড়ার জন্য নয়, অন্তরে ধারণের জন্যও। এটি একজন মুমিনকে আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের পথ দেখায়, যেখানে আধ্যাত্মিক শান্তি ও বাস্তব জীবনের সাফল্য একসাথে অর্জন করা সম্ভব।

আল্লাহর সাথে জীবনের চুক্তি
এই আয়াতটি আল্লাহর সাথে বান্দার একটি পবিত্র চুক্তি। যখন কোনো বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন আল্লাহও তাকে স্মরণ করেন। এই স্মরণ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। সুখে-দুঃখে আল্লাহর সাথে এই সম্পর্ক রক্ষা করা মানে, আল্লাহর সাহায্য ও রহমত সব সময় আমাদের পাশে থাকবে।

জিকিরের তিনটি স্তর
আল্লাহর স্মরণ বা জিকির তিনটি স্তরে প্রয়োগ করা যায়।

১. জিহ্বার জিকির, যেখানে তাসবিহ, তাহলিল, তাহমিদ, তাকবির, তাওবা ও তেলাওয়াতের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

২. অন্তরের জিকির, যেখানে আমরা আল্লাহর মহিমা নিয়ে চিন্তা করি এবং প্রতিটি কাজে তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি।

৩. কর্মের জিকির, যেখানে আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি, সময়, জ্ঞান ও সম্পদকে তাঁর সন্তুষ্টির পথে ব্যয় করা হয়।

হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি সেরকমই, যেরকম বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি বান্দার সঙ্গে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে; আমিও তাকে নিজে স্মরণ করি। আর যদি সে জনসমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, আমি আরও উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করি। (সহিহ বুখারি: ৭৪০৫)

রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের জিকির করে এবং যে তার প্রতিপালকের জিকির করে না, তাদের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪০৭) এসব হাদিস মুমিনদের জন্য অফুরান আশার বার্তা।

আয়াতের দ্বিতীয় অংশে আল্লাহ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা শুধু মুখে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা নয়, এটি একটি জীবনদর্শন। আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা, সুস্থতা, জ্ঞান ও সম্পদকে তাঁর সন্তুষ্টির পথে ব্যয় করা, এগুলোই প্রকৃত কৃতজ্ঞতা।

অন্যদিকে, অকৃতজ্ঞতা বা ‘কুফর’ হলো সেই নেয়ামতকে ভুল পথে ব্যবহার করা বা অস্বীকার করা। আল্লাহর স্পষ্ট ঘোষণা- ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, আমি তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, আমার শাস্তি কঠোর।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)

দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ
সুরা বাকারার এই আয়াতের শিক্ষা দৈনন্দিন জীবনে খুব সহজে প্রয়োগ করা যায়।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই আলহামদুলিল্লাহ বলা।
কোনো কাজের আগে বিসমিল্লাহ বলা।
অন্যের ভালো কাজ বা সৌভাগ্য দেখলে মাশাআল্লাহ বলা।
সময়, জ্ঞান ও সম্পদকে আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে ব্যবহার করা।
এই অভ্যাসগুলো শুধু আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনকে সমৃদ্ধ করে না, বরং বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।

জীবনবদলের সূত্র
যে ব্যক্তি নিয়মিত আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে, তার জীবনেই শান্তি, সাফল্য ও সমৃদ্ধি নেমে আসে। এই আয়াত অন্তরে ধারণ করলে, মানুষের চিন্তা-চেতনা ও কর্মও আল্লাহমুখী হয়। আল্লাহর স্মরণ এবং কৃতজ্ঞতা-এই দুইটি সহজ কাজের মধ্যেই নিহিত জীবনসফলতার চাবিকাঠি।

শেষ কথা: ‘নিয়মিত জিকির করুন, নিষ্ঠার সাথে শুকরিয়া আদায় করুন; আল্লাহ আপনার জীবনকে স্বীকৃতি ও বরকতে ভরে দেবেন।’

শেয়ার করুন